উত্তর কোরিয়ার নেতার ভাই মালয়েশিয়ায় খুন

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সৎ ভাই কিম জং-নাম মালয়েশিয়ায় খুন হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার এক সরকারি কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন।

>>রয়টার্স
Published : 14 Feb 2017, 02:49 PM
Updated : 14 Feb 2017, 04:28 PM

রাজধানী কুয়ালালামপুরের বিমানবন্দরে তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার টিভি চোসুন।

বিবিসি জানায়, বিমানবন্দরেই হত্যার টার্গেট হন ৪৫ বছর বয়সী কিম জং-নাম। তিনি উত্তর কোরিয়ার সাবেক নেতা কিম জং-ইল এর বড় ছেলে।

মালয়েশিয়ার পুলিশ কিম জং-নামের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। পুলিশ কর্মকর্তা ফাদজিল আহমাত বলেছেন, কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি এখনও নিশ্চিত নন তারা। তবে লাশ ময়নাতদন্ত করে দেখা হবে।

রয়টার্সকে আহমাত বলেন, “খুনের ঘটনায় এখনও কাউকে সন্দেহ করা যায়নি। তবে তদন্ত চলছে এবং কয়েকটি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তিনি জানান, কিম জং-নাম সোমবার ম্যাকাউ যাওয়ার পথে ছিলেন।  কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনালে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ঝিমুনি বোধ হচ্ছিল। এ অবস্থায় তিনি কাউন্টারে গিয়ে সাহায্য চান। এ সময় তাকে বিমানবন্দরের ক্লিনিকে নেওয়ার সময়ও তিনি খারাপ বোধ করছিলেন। ফলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর পুর্তজায়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে এম্বুলেন্সেই মারা যান তিনি।

ওদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চোসুন এর খবরে বলা হয়, দুই নারী বিমানবন্দরে সূঁচের মাধ্যমে কিম জং-নামকে বিষ প্রয়োগ করেছে। ওই দুই নারী উত্তর কোরিয়ার চর বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা ট্যাক্সিতে করে পালিয়ে গেছে এবং ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অবশ্য এ খবর নিশ্চিত করতে পারেনি। রয়টার্সও বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে কিম এর পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা বিবিসি কে জানান, মৃত্যুর ঘটনায় বিষপ্রয়োগ ঘটেছে।

বিবিসি’র খবরে বলা হয়, মালয়েশিয়া পুলিশের একটি সরকারি বিবৃতিতে নিহত ব্যক্তির নাম ‘কিম চোল’ উল্লেখ করা হয়েছে। জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১০ জুন ১৯৭০। আর কিম জং-নামের জন্ম তারিখ ১০ মে ১৯৭১।

২০০১ সালে ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে জাপানে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েছিলেন কিম জং-নাম। তখন তিনি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, তিনি টোকিওতে অবস্থিত ডিজনিল্যান্ডে যেতে চেয়েছিলেন।

ওই ঘটনার পর তিনি বাবা কিম জং-ইলের আস্থা হারান বলে ধারণা করা হয়।

পরে ২০১১ সালে তার থেকে বয়সে ছোট সৎ ভাই কিম জং-উন উত্তর কোরিয়ার নেতা হন। কিম জং-নাম বেশিরভাগ সময় বিদেশে বিশেষ করে ম্যাকাউ, সিঙ্গাপুর এবং চীনে কাটিয়েছেন।

২০১১ সালে জাপানের গণমাধ্যমে কিম জং-নামের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, তিনি ‘পরিবারতন্ত্রের উত্তরাধিকার’ বিরোধী। প্রকাশ্যেই নিজেদের পারিবারিক শাসন এবং নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন তিনি।

এছাড়া, ২০১২ সালে একটি বইতে কিম জং-নামের বরাত দিয়ে বলা হয়, তিনি মনে করেন তার ছোট ভাইয়ের নেতৃত্বগুণের অভাব রয়েছে। তিনি দেশ পরিচালনা করতে পারবেন না এবং উত্তর কোরিয়া ধীরে ধীরে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। এক পর্যায়ে দেশটিতে চীনা-ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন হবে।

এ আগেও কিম জং-নামকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।

২০১২ সালে উত্তর কোরিয়ার একজন গুপ্তচরকে কারাদণ্ড দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ওই গুপ্তচরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কিম জং-নামকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন।