চীনের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে সম্পর্কের বরফ ভাঙলেন ট্রাম্প

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ে চিঠি পাঠিয়ে একটু হলেও সম্পর্কের বরফ ভাঙলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2017, 11:29 AM
Updated : 9 Feb 2017, 12:56 PM

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্প ফোনে কথা বললেও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার ফোনালাপ হয়নি।

 তবে এবার সরাসরি চিঠি পাঠিয়ে শি’র সঙ্গে প্রথমবারের মতো যোগাযোগের সূচনা করলেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের সময়  শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোয় চিঠিতে শি কে ধন্যবাদ দিয়েছেন ট্রাম্প। চীনের সঙ্গে ‘গঠনমূলক’ সম্পর্কের অপেক্ষায় আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে দেশটির জনগণের সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।

ট্রাম্পের এ চিঠিকে চীন খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই চীনের নীতি এবং বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনা করে এসেছেন। সম্প্রতি কয়েক মাসে ট্রাম্প তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরের বিষয়টি নিয়েও চীনের বিরাগভাজন হয়েছেন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে চীনকে ক্ষুব্ধ করেছেন তিনি।

কিন্তু শি কে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প উভয় দেশের সুবিধার্থে একটি গঠনমূলক সম্পর্ক উন্নয়নে তার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারাও ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থাপণে আগ্রহী।

নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং বলেন, “প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”

অভিষেকের পর ট্রাম্প বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করলেও শি কে ফোন করেননি। এটি এক ধরনের অপমান ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, “এ ধরনের মন্তব্য অর্থহীন।”

ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরষ্পরের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে’ বলে জোর দিয়ে মন্তব্য করেন লু।

তিনি বলেন, “একমাত্র সঠিক পন্থা পারষ্পরিক সহযোগিতা।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি’র এখনও সরাসরি কথা না হলেও গত বছর নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভের পরপরই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শি।

বেইজিং থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও ধরনের ভুল বোঝাবুঝি থেকে শি কে অপদস্থ করা হয় কিনা এবং মার্কিন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়ে যায় কিনা তা নিয়ে বেইজিং কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় আছে।

মাত্র গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ ধরনের একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের বিদ্বেষপূর্ণ ওই ফোনালাপের বিস্তারিত ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা চীনের কূটনীতিক দলের ঘনিষ্ঠ ওই কর্মকতা বলেন, “চীন এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চায় না।”

“তেমন হলে তা প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের জনগণের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হবে।” 

এ বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, দুই নেতার ফোনালাপের বিষয়ে চীনের তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না।

“চীনের জন্য দুই নেতার ফোনালাপ খুবই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে হতে হবে। কারণ, ট্রাম্প কী করবেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত পূর্বানুমান করা চীনের পক্ষে সম্ভব না।”

“এছাড়া ট্রাম্প এখন চীনের প্রতি পর্যাপ্ত মনযোগ দেওয়ার অবস্থায়ও নেই। কারণ, এ মুহূর্তে অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে তাকে (ট্রাম্পকে) অনেক বেশি বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে।”