‘সিরিয়ায় গোপনে ১৩ হাজার লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’

সিরিয়ার একটি কারাগারে গোপনে প্রায় ১৩ হাজার ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2017, 09:24 AM
Updated : 7 Feb 2017, 10:17 AM

দণ্ডিতদের অধিকাংশই সরকার বিরোধীদের সমর্থক বেসামরিক ব্যক্তি বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি, খবর বিবিসির। 

নতুন ওই প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলেছে, ২০১১-র সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫-র ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে দেশটির সাইদনায়া কারাগারে গণফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

কথিত মৃত্যুদণ্ডগুলো সিরিয়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদিত হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সাইদনায়া কারাগারের সাবেক রক্ষী, বন্দি ও কারা কর্মকর্তাসহ ৮৪ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি।

ওই সাক্ষীরা বলেছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উত্তরে অবস্থিত ওই কারাগারটিতে প্রতি সপ্তাহে এবং এমনকি সপ্তাহে দুবার পর্যন্ত অত্যন্ত গোপনে ২০ থেকে ৫০ জনের একটি দলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে এসব বন্দিকে রাজধানীর কাবুন এলাকায় স্থাপিত একটি ‘সামরিক আদালতে বিচারের’ জন্য নিয়ে যাওয়া হতো, এসব বিচারে এক থেকে তিন মিনিটের মতো সময় নেওয়া হতো বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সামরিক আদালতের এক সাবেক বিচারকের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বন্দিদের জিজ্ঞেস করা হতো যা হয়েছে বলে বলা হয়েছে সেই অপরাধ তারা করেছে কিনা।

“উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ যাই হোক না কেন, তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হতো। আইনের শাসনের সঙ্গে এই আদালতের কোনো সম্পর্ক ছিল না,” বলেছেন ওই বিচারক।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাঁসি যেদিন দেওয়া হবে সেদিন বন্দিদের বলা হতো, তাদের একটি বেসামরিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর ভূগর্ভস্থ সেলে নিয়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা ধরে পিটানো হতো।

তারপর মধ্যরাতে চোখ বেঁধে তাদের কারাগারের অন্য অংশে নিয়ে যাওয়া হতো, এখানে তাদের আবারও একটি ভূগর্ভস্থ ঘরে নিয়ে ফাঁসি দেওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে জানানো হতো তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

এরপর লাশগুলো লরিতে ভরে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দামেস্কের তিশরিন সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো, তারপর সামরিক এলাকার গণকবরে তাদের কবর দেওয়া হতো। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের এসব সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি হিসাব করেছে, পাঁচ বছরে সাইদনায়া কারাগারে পাঁচ হাজার থেকে ১৩ হাজার লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। 

তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে থেকেই সিরিয়া সরকার বন্দিদের হত্যা অথবা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে আসছে।

এক বছর আগে জাতিসংঘের এক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য ও দালিলিক স্বাক্ষ্যপ্রমাণ জোরালোভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, হাজার হাজার লোককে আটক করে রাখা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ‘ব্যাপক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে’।