অভিষেক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ-বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিকে কার্যত দূর্গে পরিণত করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
শপথের আগের রাতেই হাজারও বিক্ষোভকারী নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়।
ট্রাম্প সমর্থক ও বিরোধী সংগঠকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক উপলক্ষে পক্ষে-বিপক্ষের প্রায় ৯ লাখ লোক ওয়াশিংটনে জড়ো হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
যুক্তরাষ্টের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলের শপথ অনুষ্ঠান শেষে ট্রাম্প তার সমর্থকদের নিয়ে পেনসিলভানিয়া অ্যাভেনিউ ধরে শোভাযাত্রার করে হোয়াইট হাউসে যাবেন। এ সময় রাস্তার দুইপাশে ভিড় করে মানুষ নতুন প্রেসিডেন্টের প্যারেড উপভোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে প্রায় ৩০টি সংগঠন ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি পেয়েছে; আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বোস্টন থেকে লস অ্যাঞ্জেলস পর্যন্ত বিভিন্ন শহরেও বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলছে।
দেশ ছাড়িয়ে ট্রাম্পবিরোধী এ প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বাইরেও। লন্ডন ও সিডনির মত শহরেও ট্রাম্পের শপথের দিন বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
শপথের আগে নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজনীতিবিদ, অধিকার আন্দোলন কর্মী ও খ্যাতিমান শিল্পীরা। এদের মধ্যে আছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো ও অভিনেতা অ্যালেক বল্ডউইন।
নিউ ইয়র্কের বিক্ষোভ সমাবেশে ব্লাসিয়ো বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো ওয়াশিংটন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, কিন্তু আমেরিকার জনগণই তাদের পথ ঠিক করবে।
“আমরা ভবিষ্যৎকে ভয় করি না। আমরা জানি ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, যদি মানুষের আওয়াজ আরও শক্তিশালী হয়,”বলেন তিনি।
ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব ভবনের বাইরে ওই সংঘর্ষ চলার সময় ক্লাব ভবনের ভেতরে ট্রাম্পসমর্থকরা তখন ট্রাম্পের বিজয় ও শপথ উদযাপন অনুষ্ঠান করছিলেন।
শপথের দিন ট্রাম্পের সমর্থক ও বিরোধীরা বিবাদে জড়াতে পারে, এ অনুমান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু থেকেই কৌশল অবলম্বন করবে বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি জে জনসন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের লক্ষ্য থাকবে দুটি গ্রুপকে আলাদাভাবে তাদের যার যার কাজ করতে দেওয়া, যেমনটা গত বছর রাজনীতিক দল দুটির কনভেনশনের সময় করা হয়েছিল।
জনসন এমএসএনবিসি টিভিকে বলেন, “উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে কিছু দল ট্রা্ম্পের সমর্থক, কিছু ট্রাম্পবিরোধী। তারা হয়তো একই সময়ে একই জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি নাও করতে পারে।”
নির্বাচনী প্রচারে নারী, অবৈধ অভিবাসী ও মুসলমানদের নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য, ওবামার সময় নেওয়া স্বাস্থ্যসেবা বাতিল ও মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলে দেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনেককেই খেপিয়ে তুলেছে।
অন্যদিকে রিপাবলিকান সমর্থকরা দেখেছেন রিয়েল এস্টেটসহ নানান ব্যবসায় ট্রাম্পের অবিস্মরণীয় সাফল্য।
দলটি এর আগে ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকান কনভেনশনেও এভাবে শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে অবস্থান নিয়েছিল।
বাইকারস ফর ট্রাম্পের ৬৩ বছর বয়সী সংগঠক ডেনিস এগবার্ট জানান, ট্রাম্পবিরোধীরা যেন শোভাযাত্রার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য সজাগ থাকবেন তারা।
নিরাপত্তার চাদর
শপথের দিন কমবেশি ২৮হাজার নিরাপত্তা কর্মী ওয়াশিংটনের কেন্দ্রস্থলের তিন বর্গমাইল এলাকাজুড়ে নিরাপত্তার দেয়াল গড়ে তুলবে। সঙ্গে থাকবে মাইলখানেক লম্বা কাঁটাতারের বেড়া, রাস্তা ও সড়ক অবরোধের যন্ত্রপাতি, ডাম্প ও বালুভর্তি শতাধিক ট্রাক।
ট্রাম্পবিরোধী ‘ডিজরাপ্ট জে ২০’ দলের সদস্যরা এদিন শপথস্থলে ঢোকার ১২টি প্রবেশপথে বিক্ষোভ দেখিয়ে ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বাধা দিয়ে ক্যাপিটল হিলের উৎসব বানচালের ঘোষণা দিয়েছে।
তারপরও শুক্রবারের এ জনসমাগম ৮ বছর আগে বারাক ওবামার শপথের তুলনায় অনেক কম।
আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৯ এর ২০ জানুয়ারি শপথের দিন ওয়াশিংটনে প্রায় ২০ লাখ সমর্থকের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন ওবামা। দ্বিতীয় দফায় শপথ নেওয়ার দিনও ওয়াশিংটনে জড়ো হয়েছিল ১০ লাখ সমর্থক।
ট্রাম্পের শপথের দিন বৃষ্টি হতে পারে এমন পূর্বাভাস থাকায় ছাতার ব্যাপারে আগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে পুলিশ। এখন তারা বলছে, যে কেউ চাইলে এদিন ছোট আকারের ছাতা ব্যবহার করতে পারবেন।