আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের ওই উড়োজাহাজে এক শিশুসহ ১১১ যাত্রী এবং সাতজন ক্রু ছিলেন। ছিনতাইকারীর আত্মসমর্পণের আগেই আরোহীদের সবাইকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ রুটের ওই উড়োজাহাজ স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ১০ মিনিটে সাবহা থেকে ১১১ জন আরোহী ও সাতজন ক্রু নিয়ে ত্রিপোলির পথে রওনা হয়। কিন্তু গ্রেনেড ফাটানোর হুমকি দিয়ে ছিনতাইকারীরা এয়ারবাস এ৩২০ উড়োজাহাজটিকে ভূমধ্যসাগরীয় ক্ষুদ্র দেশ মাল্টায় নিয়ে যায় এবং সেখানে নামতে বাধ্য করে বিবিসির খবর।
লিবিয়ার একটি টেলিভিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়ে, এই ছিনতাইকাণ্ড ঘটিয়েছে লিবিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির সমর্থক একটি সংগঠন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নাটকীয়তা সৃষ্টি করে নিজেদের দলকে পরিচিত করা।
মুসকাট বলেন, দুই ছিনতাইকারী কোনো দাবি-দাওয়ার কথা বলেনি। গ্রেপ্তার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
“ঠিক কী ঘটেছিল তা জানতে যাত্রী আর ক্রুদের সাথেও কথা বলব আমরা। পরে আফ্রিকিয়ার আরেকটি বিমানে করে যাত্রী ও ক্রদের লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে।”
ওই বিমানের আরোহীদের মধ্যে আবদুসসালেম মারবিত নামে লিবিয়ার একজন পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আরেক পার্লামেন্ট সদস্য হাদি আল-সগির রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ছিনতাইকারী দুইজনের বয়স ২০ এর ঘরে। তারা দক্ষিণ লিবিয়ার টেবু গোত্রের সদস্য বলে আবদুসসালেমের ধারণা।
লিবিয়ার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, বিমানটি আকাশে থাকতেই পাইলট ত্রিপোলি বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানান। তিনি ত্রিপোলিতে নামার চেষ্টা করলেও ছিনতাইকারীরা তা করতে দেয়নি। কিছুক্ষণ পর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে বিমানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ততক্ষণে মাল্টার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উড়োজাহাজটির কয়েকশ মিটার দূরে অবস্থান নেয়। টারমাকে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ফ্লাইটের উড্ডয়ন আটকে যায়, কয়েকটি ফ্লাইটকে অকাশেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয় অন্যদিকে।
এরপর মাল্টা সরকারের পক্ষ থেকে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা ধাপে ধাপে যাত্রী ও ক্রুদের মুক্তি দিতে শুরু করে। মুক্ত যাত্রীদের সরিয়ে নিতে একটি বাস নিয়ে আসা হয় টারমাকে।
মাল্টার প্রধানমন্ত্রী মুসকাট নিয়মিত টুইট করে এই ঘটনাপ্রবাহের হালনাগাদ তথ্য দিতে থাকেন। অধিকাংশ আরোহীকে মুক্তি দেওয়ার পরও ছিনতাইকারীরা পাইলটকে আটকে রাখে, যা নিয়ে শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা চলে।
এরই মধ্যে লিবিয়ার একটি টেলিভিশন স্টেশন জানায়, তারা এক ছিনতাইকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ওই ব্যক্তি নিজের নাম বলেছেন মুসা শাহা। নিজেকে আল-ফাতেহ আল গাদিদা (নতুন আল ফাতেহ) নামের একটি সংগঠনের প্রধান দাবি করে তিনি বলেছেন, দলকে পরিচিত করতেই তারা বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর যে অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গাদ্দাফি লিবিয়ার ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার নাম তিনি দিয়েছিলেন আল-ফাতেহ বিপ্লব। ন্যাটো জোটসমর্থিত অভ্যুত্থানে ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পালিয়ে বেড়ানোর সময় বিদ্রোহীদের হাতে তিনি নিহত হন।
গাদ্দাফির স্বৈরশাসনের অবসানের পর থেকে লিবিয়ায় ব্যাপক অরাজকতা চলছে। বিভিন্ন দল, উপদল সেখানে সংঘাতে লিপ্ত।
লিবিয়ার আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাহের সিয়ালা বলেছেন, বিমানটি যারা ছিনতাই করেছিল, তারা গাদ্দাফির আদর্শে একটি রাজনৈতিক দল গড়তে চায়।
প্রধানমন্ত্রী মুসকাট তখন এক টুইটে বলেন, “ছিনতাইকারীরা আত্মসমর্পণ করেছে। তল্লাশি করে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”