তাইওয়ানকে ‘এক চীন’ এর অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে একে বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্কের মূলভিত্তি বলার দীর্ঘদিনের অবস্থানে অবিচল থাকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি নয় বলেই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
‘ফক্স নিউজ সানডে’র সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি এক চীন নীতি পুরোপুরিই বুঝি। কিন্তু যদি বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে চীনের সঙ্গে আমরা কোনও চুক্তি না করি, তাহলে আমাদেরকে কেন এক চীন নীতি মেনে চলতে হবে তা বুঝি না।”
প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এক চীন নীতি মেনে আসছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এবছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্প রীতি ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধের সূচনা করেছেন।
গত ২ ডিসেম্বর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ফোন করলে তার সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, “তাইওয়ান নিয়ে চীনের মূল আগ্রহের জাগয়াটি যদি ওয়াশিংটন বুঝতে না পারে তবে দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রশ্নই আসে না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, “চীন খবরটি আমলে নিয়েছে এবং এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, তাইওয়ান ইস্যুটি চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং অন্যতম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়।”
দৈনিক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে শুয়াং বলেন,“এক চীন নীতি সমুন্নত রাখাটা চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি। এ নীতি ব্যাহত হলে বা ভেস্তে গেলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সৌহার্দপূর্ণ অগ্রগতি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার কোনও প্রশ্নই আসে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি ট্রাম্প প্রশাসনকে তাইওয়ান ইস্যুর স্পর্শকাতরতার বিষয়টি পুরোপুরি মাথায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শুয়াং বলেন, “চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ব্যাহত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করতে না চাইলে এক চীন নীতি সমুন্নত রাখুন।”
“বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্ব আছে। এটি কেবল দুই দেশ ও তাদের জনগণের সুখশান্তির বিষয় নয় বরং পুরো এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিরও ব্যাপার।”
চীনের গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েড আরও কড়া ভাষায় ট্রাম্পকে তাইওয়ান নীতির ব্যাপারে সতর্ক করেছে। চীনকে ট্রাম্পের সঙ্গে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবেই লড়তে হবে। কয়েকবার বাজেভাবে প্রত্যাখ্যাত হলেই তিনি বুঝে যাবেন চীন বা অন্য কোনও বিশ্বশক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি।
চীনের কাছ থেকে কোন ধরনের বাণিজ্যিক ছাড় না পেলে এক চীন নীতির গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছে এর জবাবে গ্লোবাল টাইমস বলেছে, “এ নীতি নিয়ে কোনও বাণিজ্য চলবে না।”
পত্রিকাটি আরও বলেছে, “ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী হতে পারেন। কিন্তু কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি একটি শিশুর মতই নির্বোধ।”