‘আদি সাত’ মার্কিন নভোচারীর উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান

যুক্তরাষ্ট্রের আদি নভোচারী দলের শেষ সদস্য জন গ্লেনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মার্কিন মহাকাশ কর্মসূচির ইতিহাসের উজ্জ্বল এক অধ্যায়ের অবসান হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2016, 04:27 PM
Updated : 9 Dec 2016, 04:27 PM

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার ওহাইওর একটি হাসপাতালে ৯৫ বছর বয়সে মারা যান পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করা প্রথম মার্কিন নভোচারী জন গ্লেন।

১৯৫৯ সালে মিলিটারি পাইলটদের মধ্য থেকে ৭ জনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নভোচারী হিসেবে নির্বাচিত করেছিল মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। দলটি ‘মার্কিউরি সেভেন’ বা ‘আদি সাত’ নামে পরিচিতি পায়। জন গ্লেন ছিলেন তাদেরই একজন।

সাত সদস্যের ওই দলটিতে ছিলেন:

অ্যালান বি. শেপার্ড , জুনিয়র

মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা প্রথম মার্কিন নভচারী ছিলেন শেপার্ড। ১৯৬১ সালের ৫ মে ফ্রিডম৭ মহাকাশযানে করে তিনি যাত্রা শুরু করেন। মহাশূন্যে ১১৬ মাইল উচ্চতায় পৌঁছানোর পর তিনি পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন।

এরপর ১৯৭১ সালে অ্যাপলো১৪ মহাকাশযানে করে চাঁদে রওনা হওয়া মার্কিন দলটির নেতৃত্ব দেন তিনি। শেপার্ড চাঁদের মাটিতে হাঁটা পঞ্চম মহাকাশচারী।

১৯৯৮ সালে ৭৪ বছর বয়সে ‍লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান শেপার্ড।

‘জন এইচ গ্লেন, জুনিয়র

জন গ্লেনই ছিলেন প্রথম মার্কিন নভোচারী যিনি ১৯৬২ সালে স্পেস ক্যাপসুল ফ্রেন্ডশিপ সেভেনে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিলেন। এ মহাকাশ ভ্রমণই তাকে কিংবদন্তী করে তোলে।

১৯৯৮ সালে তিনি আবার মহাকাশে যান। এটিই ছিল তার সর্বশেষ মহাকাশ ভ্রমণ। তখন তার বয়স ছিল ৭৭। ফলে সবচেয়ে বেশি বয়সে মহাকাশে যাওয়ার রেকর্ডটিও তিনিই গড়েছিলেন।

গ্লেন ১৯২১ সালে  জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি পাইলট ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

সত্তরের দশকে নাসা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন গ্লেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ডেমোক্রেট সিনেটর নির্বাচিত হন। ২৪ বছরপর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

২০১১ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল লাভ করেন গ্লেন, যুক্তরাষ্ট্রে এটা সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাণনা।

এক বছর পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে স্বাধীনতা পদক নেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে ওহাইওর একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ৯৫ বছর বয়সে মারা যান জন গ্লেন।

‘ভার্জিল আই. গ্রিসুম’

গ্রিসুম হলেন প্রথম নভচারী যিনি দুইবার মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি ১৯৬১ সালে দ্বিতীয় সাবঅরবিট মার্কিউরি ফ্লাইট এবং ১৯৬৫ সালে ফার্স্ট জেমাইনি মিশন এ অংশ নেন।

১৯৬৭ সালে অ্যাপোলো১ এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের সময় লঞ্চপ্যাডে বিস্ফোরণে গ্রিসুম এবং আরও দুই নভোচারীর মৃত্যু হয়।

‘স্কট কার্পেন্টার’

কার্পেন্টার হলেন দ্বিতীয় মার্কিন নভচারী যিনি পৃথিবীর কক্ষপথে পরিভ্রমণ করেন।

১৯৬৩ সালে তিনি আরোরা৭ ক্যাপসুলে করে তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন।

১৯৬৫ সালে তিনি নাসা ছাড়েন এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ম্যান-ইন-দ্য-সি প্রকল্পে একজন ডুবুরি হিসেবে কাজ করেন।

২০১৩ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ৮৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

 ‘এল. গর্ডন কুপার, জুনিয়র’

১৯৬৩ সালে মার্কিউরি মিশনের শেষ নভচারী ছিলেন কুপার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নভচারী যিনি একা মহাকাশ অভিযানে যাত্রা করেন।

তিনি তার ফেইথ৭ ক্যাপসুলে করে ২২ বার পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন, একদিনের বেশি সময় ধরে তার ওই মহাকাশ অভিযান চলে।

১৯৬৫ সালে জেমাইনি ফাইভে চড়ে তিনি দ্বিতীয়বার মহাকাশে যান। সেবার তিনি আট দিন মহাকাশে অবস্থান করেন, যা ওই সময়ে মহাকাশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানের রেকর্ড।

পরে কুপার বলেন, তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি মহাকাশে ঘুমিয়েছেন। ওই সময় তিনি কোনও  স্বপ্ন দেখেননি বলেও দাবি করেছিলেন।

২০০৪ সালে ৭৭ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

‘ওয়াল্টার এম. স্চিরা, জুনিয়র’

স্চিরা হলেন প্রথম মার্কিন নভোচারী যিনি মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ পাঠানোর প্রথম তিনিটি প্রকল্পের সবগুলোতে অংশ নিয়েছেন। সেগুলো হল: মার্কিউরি, জেমাইনি ও অ্যাপোলো মিশন।

১৯৬৫ সালে তার নেতৃত্বে জেমাইনি৬ মহাকাশযান মহাশূন্যে যাত্রা করে। ১৯৬৮ সালে অ্যাপোলো৭ এর নেতৃত্বও দেন তিনি।

পাকস্থলি ক্যান্সারে সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ২০০৭ সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

‘ডোনাল্ড কে. স্লাইটন’

১৯৬২ সালে মার্কিউরি মিশনের জন্য নির্বাচিত হলেও পরে অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্য বাদ পড়ে যান স্লাইটন।

পরে তিনি নাসার ফ্লাইট ক্রু অপারেশন্স এর পরিচালকের দায়িত্ব পান।

১৯৭৫ সালে তিনি আমেরিকা-সোভিয়েত প্রথম যৌথ মহাকাশ অভিযান অ্যাপোলো-সয়ুজ টেস্ট প্রজেক্টে অংশ নেন।

মস্তিষ্ক টিউমারে আক্রান্ত স্লাইটন ১৯৯৩ সালে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান।