বিচ্ছিন্নকরণের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে সতর্ক করল চীন

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিচ্ছিন্নকরণ এবং হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2016, 05:55 PM
Updated : 10 Nov 2016, 05:55 PM

এর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আন্তর্জাতিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় অনেক বেশি একতরফা পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করা এবং বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়।

কিন্তু সেই হুমকির নীতি ট্রাম্প আসলেই কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন সে সম্পর্কে এখনও কিছু আঁচ করতে পারছে না চীন ও অন্যান্য দেশের সরকার। কারণ, তিনি অনেক সময়ই পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন এবং বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে কিভাবে কাজ করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছুই তিনি বলেননি।

নির্বাচনি প্রচারাভিযানে চীনকে বরাবরই আক্রমণ করে কথা বলেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের ক্ষতির জন্য তিনি বেইজিংকে দায়ী করেছেন। চীনা রপ্তানির ওপর ৪৫ শতাংশ শুল্কও আরোপ করতে চেয়েছেন তিনি। রিপাবলিকানরাও ট্রাম্পের প্রথম ১শ’ দিনের কাজের মধ্যেই চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ ঘোষণা করার অঙ্গীকার করেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সিনহুয়া বার্তা সংস্থা এক মন্তব্য প্রতিদেনে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নকরণ নীতি মহামন্দার সময় দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট তরান্বিত করেছে।” যদিও সংস্থাটি বলেছে, “নির্বাচনী বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচনী বক্তব্য।”

চীনে কোনওরকম হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে সিনহুয়া।

বাস্তববাদী মানুষ

চীনের গণমাধ্যম অতীতে আফগানিস্তান, ইরাক এবং ইউক্রেইনে হস্তক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে এসেছে। 

ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে তাদেরকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চারম মূল্য দিতে হয়েছে।

চীনে অনেকেই হিলারি ক্লিনটনকে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রাসী মনে করেছে। আবার অনেকে ট্রাম্পকে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে সম্ভাবনাময় একজন বাস্তববাদী মানুষ হিসাবে দেখেছে।

কিন্তু ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি নিয়ে কোনও কিছু আগাম ধারণা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আশংকায় আছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রেখেই চলতে চায় দেশটি। একারণে চীন চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একযোগে একটি নতুন ধরনের প্রভাবশালী সম্পর্ক গড়তে।

নতুনত্বের চমক

চীনের ইন্টারনেটে খুব গভীরভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে ট্রাম্পের বিজয়। ট্যাগ ছিল ‘ট্রাম্প জিতেছেন’। 

কয়েকটি পোস্টে বলা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিবর্তনটি এখন দরকার ট্রাম্পই হয়ত সে পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ পরিবর্তন আনার জন্য অনিশ্চয়তাকেই বেছে নিয়েছে।

চিরাচরিত, নিশ্চিত পদ্ধতি যখন অনেক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় তখনই এর পরিবর্তে দরকার হয় নতুনত্বের চমক।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এর আগে বলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় একটি সমস্যাসঙ্কুল রাজনৈতিক ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নির্বাচনে এটিও পরিস্কার হয়ে গেছে যে, দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে কখন তারা বেরিয়ে আসবে সেটিও অনিশ্চিত।

চীনের ক্ষমতাসীন দলের পিপলস ডেইলি পত্রিকার প্রকাশিত ট্যাবলয়েড ‘গ্লোবাল টাইমস’ বলেছে, ট্রাম্পের জয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মূলে অনেক বড় একটি ধাক্কা। তবে ট্রাম্প মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বেশিকিছু পরিবর্তন আনতে পারবেন না।

কারণ, অভিজাত-নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাশালীদের বেশিরভাগই ট্রাম্পকে সমর্থন করে না।  তাছাড়া, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো বিচ্ছিন্নকরণ নীতি থেকে ট্রাম্পকে বিরত থাকার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।