ট্রাম্পের জয়ে বদলে যেতে পারে বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে বদলে যেতে পারে বাদবাকি বিশ্বের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2016, 01:44 PM
Updated : 10 Nov 2016, 02:08 PM

ছয়রকমভাবে এ বদল ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এগুলো হল:

নেটোর সঙ্গে সম্পর্কে সংকট

সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (নেটোর) তীব্র সমালোচনা বরাবরই করে এসেছেন ট্রাম্প।

এ জোট পুরোনো ধাঁচের এবং এর সদস্যদেশগুলোকে অকৃতজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার মতে, নেটো জোটে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সুরক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু এ সামরিক সুবধাভোগের জন্য তারা পর্যাপ্ত খরচ করছে না। নিরাপত্তা ভোগ করতে হলে সবাইকেই যার যার ব্যয়ভার বহন করতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রই এ সংস্থায় সবচেয়ে বেশি অর্থ দিচ্ছে। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ছাড়া ইউরোপ এবং এশিয়ার মিত্রদেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আর প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

নেটো দেশগুলো প্রতিরক্ষার জন্য বেঁধে দেওয়া নূন্যতম ২ শতাংশ জিডিপি পরিশোধ না করলে এ জোটের মিত্রদেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া উচিত বলেই ট্রাম্প মনে করেন। তার এ পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ৬০ বছরের পররাষ্ট্র ও সামরিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ

শুরু থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে আসছেন ট্রাম্প। তিনি বরাবরই পুতিনকেপ্রেসিডেন্ট ওবামার চেয়েও ভাল ও যোগ্য নেতা হিসেবে অভিহিত করে আসছেন।

রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা প্রশমন করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস ট্রাম্পের। পুতিনের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলায় আগ্রহী তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দীর্ঘ দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের ডাক দিয়ে তার শাসনামল শুরু করলেও দুদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনই চলেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দুই দেশের ভিন্ন ভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দেওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার কথা বললেও ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে (আইএস) দুই দেশের একযোগে লড়াই করে যাওয়া ছাড়া আর কোন কোন ক্ষেত্রে দুদেশের সম্পর্ক ভাল হতে পারে সে সম্পর্কে তেমন কিছুই তিনি বলেননি।

তবে ট্রাম্প বলছেন, রাশিয়া যৌক্তিক আচরণ করলে তিনি বারাক ওবামা বা হিলারি ক্লিনটনের তুলনায় ভালো  ভূমিকা রাখতে পারবেন।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে বাদবাকি বিশ্বের সঙ্গে যে ব্যবসা করে আসছে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ঘটবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে।

তিনি বেশকিছু সংখ্যক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যকার উত্তর-আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এ চুক্তির কারণে মার্কিনিদের চাকুরির সুযোগ বিদেশিরা নিয়ে নিচ্ছে বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই এ ধরনের চুক্তিগুলো বাতিলের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার পক্ষপাতি তিনি।

এছাড়াও ট্রাম্প রপ্তানির ওপর কর আরোপ চান। চীনের ওপর ৪৫ শতাংশ এবং মেক্সিকো থেকে সরবরাহকৃত পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান তিনি।

হুমকিতে পড়বে ইরানের পরমাণু চুক্তি

ইরানের সাথে চুক্তি করে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন এনেছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু ট্রাম্প মনে করেন, ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের এ চুক্তিটি যথাযথ হয়নি। ফলে চুক্তিটি বাতিলেরই পক্ষপাতি তিনি। ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নিলে মধ্যপ্রাচ্যে আবার নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ মধপ্রাচ্যে সিরিয়ার সংঘাতে ইরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে। তাছাড়া, সৌদি আরব এবং ইসরায়েলেরও বিরোধী দেশ ইরান।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ ট্রাম্পকে এরই মধ্যে পরমাণু চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিব্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরান বলছে, ছয়টি বিশ্বশক্তির সঙ্গে এ চুক্তিটি হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এটিকে শ্রদ্ধা করা উচিত।

এশিয়ায় আরও পরমাণু অস্ত্র?

ট্রাম্পের শাসনামলে এশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়বে। চীন এরই মধ্যে অনেকবেশি বিচ্ছিন্নতামূলক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে।

জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়াকে তো ট্রাম্প এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশিমাত্রায় নির্ভর করার জন্য ভর্ৎসনা করেই রেখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতির বিনিময়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে আরও অর্থ দেওয়া উচিত এবং চীন ও উত্তর কোরিয়াকে জবাব দিতে দেশদুইটির (জাপান ও দ. কোরিয়া) এমনকি নিজেদেরও পরমাণু সক্ষম হয়ে ওঠা উচিত বলে মনে করেন ট্রাম্প। তিনি দেশদুটিকে নিজেদের পরমাণু শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে দেওয়ার পদক্ষেপ নিলে এশিয়ায় আরও পরমাণু অস্ত্রের পট প্রস্তুত হবে।

এশিয়ার এ অঞ্চলটিতে বরাবরই চোখ রাঙিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া। তাদের আস্ফালন সামাল দেওয়ার কাজটি করতে হবে ট্রাম্পকেই। কিভাবে তিনি সেটি করবেন তা স্পষ্ট নয়। গতবছর ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতাকে একইসঙ্গে ‘মন্দ লোক’ বলে গালিও দিয়েছেন আবার এও বলেছেন যে তিনি তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান।

জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে হুমকি

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেওয়া প্যারিস ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার কথা ট্রাম্প আগেই বলেছেন।।

ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ওবামার চালু করা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নিয়মবিধি সব উল্টে দেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

মানুষের কার্যকলাপের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে—এমন ধারণা ভুল বলেই মনে করেন তিনি। আর সেকারণেই বিভিন্ন স্বচ্ছ জ্বালানি প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তনের যে কোনও উদ্যোগে সরকারি অর্থব্যয় বন্ধ করতে চান ট্রাম্প।

জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের সব অনুদানও বন্ধ করে দেওয়ার কথা ইতোমধ্যেই বলেছেন ট্রাম্প।

তবে অনুদান বন্ধ করলও আইনগত কিছুকিছু বাধ্যবাধকতার কারণে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু নীতি পুরোপুরি রদবদল করতে পারবেন না। বিশেষ করে প্যারিস চুক্তি চার বছর মেনে চলতে যুক্তরাষ্ট্র আইনগতভাবে বাধ্য।

‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ বলছে, এ বাধ্যবাধকতার কারণে ট্রাম্প চুক্তিটি বাতিল করতে না পারলেও চুক্তির বাস্তবায়ন ধীরোগতির করে ফেলতে পারেন। ফলে চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে।