ইতিহাস গড়তে পারলেন না হিলারি, হার হল যেসব কারণে

ইতিহাস আর গড়তে পারলেন না ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিলেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2016, 05:44 PM
Updated : 9 Nov 2016, 06:39 PM

অথচ ভোটের আগে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসের মধ্যেও এগিয়ে ছিলেন হিলারি। শেষ দিন পর্যন্ত বেশির ভাগ জরিপের ফলই বলছিল হিলারিই জিতবেন। সর্বশেষ জরিপেও হিলারির জেতার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বলা হয়েছিল।

গণমাধ্যমসহ রিপাবলিকান নেতাদেরও একটি অংশ প্রকাশ্যে তাকে সমর্থন দিয়েছিল। তার হয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। হলিউডের নামকরা সেলিব্রিটিরাও তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তারপরও সব হিসেবকে ভুল প্রমাণিত করে হিলারি হারলেন।

আফ্রিকান-আমেরিকান ও ল্যাটিনো ভোটে ঘাটতি

আফ্রিকান-আমেরিকান, স্প্যানিশভাষী ল্যাটিনো, নারী, শ্বেতাঙ্গদের ভোটে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার আশায় ছিলেন হিলারি।

ওবামার পর পর দুইবার জয়ের পেছনে এই মার্কিন ভোটাররাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনের ফল বলছে, এই চার শ্রেনীর ভোটারদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন পাননি হিলারি।

বরং উল্টো আফ্রিকান আমেরিকান এবং ল্যাটিনোদের একটি বড় অংশের ভোট গেছে ট্রাম্পের পক্ষে। যদিও ট্রাম্প আফ্রিকান-আমেরিকান এবং মেক্সিকানদের নিয়ে অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করেছিলেন।

এর আগে ২০১২ সালে ওবামা ভোটারদের এ অংশ থেকে পেয়েছিলেন ৯৩ শতাংশ ভোট। আর হিলারি এবার পেয়েছেন মাত্র ৮৮ শতাংশ ভোট।

একই অবস্থা দেখা গেছে ল্যাটিনো ভোটের ক্ষেত্রেও। ওবামা সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে ল্যাটিনোদের প্রতি হিলারিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেও তারা সেভাবে তার ডাকে সাড়া দেয়নি। ২০১২ সালে ওবামা ল্যাটিনো ভোটের ৭১ শতাংশ পেয়েছিলেন । আর   এবার হিলারির ক্ষেত্রে তা নেমে এসেছে ৬৫ শতাংশে।

শ্বেতাঙ্গ, এশিয়ান ও তরুণদের ভোটেও কমতি

তাছাড়া, ওবামা শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের কাছে যতটা জনপ্রিয় ছিলেন হিলারি তাদের কাছে ততটা জনপ্রিয় হতে পারেননি। হিলারি মাত্র ৩৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট পেয়েছেন, যেখানে ওবামা পেয়েছিলেন ৩৯ শতাংশ ভোট।

সিএনএন বলছে, এশিয়ান ভোটারদের মধ্যেও হিলারি খুব বেশি জনপ্রিয় ছিলেন না। ২০১২সালে ওবামা ৭৩ শতাংশ এশিয়ান ভোট পেয়েছিলেন। অথচ এবার হিলারি পেয়েছেন মাত্র ৬৫ শতাংশ এশিয়ান ভোট।

কিন্তু হিলারির মূল ধাক্কাটি এসেছে তরুণ ভোটারদের কাছ থেকে। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের বিদ্রুপাত্মক, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য তরুণ ভোটারদের দূরে সরিয়ে দিয়েছিল বলে অনেকে মনে করছিলেন। হিলারিও এদের দলে টানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু  ভোটের ফলে দেখা গেছে, এ শ্রেণীর ভোটারদের কাছ থেকে হিলারি পেয়েছেন মাত্র ৫৫ শতাংশ ভোট। ২০১২ সালে ওবামা পেয়েছিলেন যেখানে ৬০ শতাংশ ভোট।

কেন এমন হল? অনেকের মতে এ অংশের ভোটারদের মধ্যে হিলারি নন বরং অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স। দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্নির বাম ঘেঁষা চিন্তাভাবনা  জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বার্নিকে শেষ পর্যন্ত হিলারির কাছে হারতে হয়। ফলে তরুণ ভোটাররা আর হিলারির পাশে সে ভাবে দাঁড়ায়নি।

তেমন ভোট দেননি নারীরাও

এই প্রথম কোনও নারীকে প্রেসিডেন্ট করার জন্য নারীরা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। ওবামা ২০১২ সালে নারীদের মধ্য থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। আর হিলারির জুটেছে ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে, নারীদের ৭০ শতাংশই নারীর প্রতি ট্রাম্পের আচরণ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেও ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ নারী ভোট।

বুথে যাননি অনেক ডেমোক্র্যাট ভোটার

অনেকেই মনে করেন ট্রাম্পকে তীব্র অপছন্দ করলেও অনেক ডেমোক্র্যাট ভোটার বুথ মুখো হননি। এতে করে ডেমোক্র্যাটদের ধারাবাহিক ভাবে জেতা বেশ কিছু প্রদেশে এ বার ট্রাম্প জিতেছেন।

পাশাপাশি রিপাবলিকান ভোটদের বুথমুখী করতে পেরেছেন ট্রাম্প। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ, সমকামীদের অধিকার, ইরান ও কিউবার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক— প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারিএমন বেশ কিছু নীতির প্রবল বিরোধী রিপাবলিকানরা। ফলে ব্যালটে সেই বিরোধিতারই স্বাক্ষর  রেখে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি নিশ্চিত করেছেন তারা।