যেই জিতুক; মার্কিন সম্পর্কে পরিবর্তন দেখছে এশিয়া

ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন বা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প- যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যেই হন, এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2016, 03:57 PM
Updated : 8 Nov 2016, 03:57 PM

ট্রাম্প হারুন বা জিতুন, তিনি যে প্রচারাভিযান চালিয়েছেন তাতে করে এশিয়ার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে যে দৃষ্টিতে দেখে তা বদলে গেছে।

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চূড়ান্ত জরিপে হিলারি ক্লিনটনের দিকে জয়ের পাল্লা ঝুঁকে থাকারই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

কিন্তু এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্কের ভীত তৈরির অন্যতম কারিগর হিলারি ভোটে জিতলেও তাকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর আস্থা ফেরানোর জন্য আরও কাজ করতে হবে বলেই মনে করছেন এশিয়ার বিশ্লেষকরাসহ সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক জাপানি কুটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, “ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন বা না হন, (এশিয়ায়) যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের অবসান হতে চলেছে। বিশেষ করে বলতে গেলে, নৈতিক নেতৃত্বের।”

“এ প্রশ্ন শুধু ব্যক্তি ট্রাম্পের, আমার এমন মনে হয় না। বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের পুরো সমাজের প্রশ্ন। তারাই ট্রাম্পের মতো মানুষকে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত করেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে দুমড়ে-মুচড়ে নির্বাচনী প্রচারে উসকানিমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। হাজার হাজার মানুষ তার ওই বক্তব্য শুনে করতালিও দিয়েছে। 

হিলারি তাকে অজ্ঞ, অমার্জিত, বর্ণবাদী, বিশ্বাসঘাতক, বাচাল ও যৌন শিকারী বলেছেন। যথারীতি সব কিছু অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।

ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি নিয়ে এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এশিয়ার মোট জিডিপি-র এক-চতুর্থাংশ আসে রপ্তানি আয় থেকে। ওই রপ্তানি পণ্যের একপঞ্চমাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এশিয়ার দেশগুলোর অন্যতম আন্তর্জতিক বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) সমর্থন করলেও হিলারি ও ট্রাম্প উভয়ই এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। যে চুক্তির লক্ষ্য চীন বাদে ১২ দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা। ফলে চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার দেশগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীই এর বিরোধিতা করায় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যেই হন এ চুক্তির আর কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ছাতিব বসরি রয়টার্সকে বলেছেন, “এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভিত্তির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ টিপিপি।”

“কিছু কিছু বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্ব চলছে এবং আমেরিকার এশিয়ায় প্রবেশের পথ হল টিপিপি চুক্তি।”

সিঙ্গাপুরের ‘লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসি’র অধ্যাপক কান্তি বাজপাই বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র টিপিপি থেকে সরে যায় তবে নিশ্চিতভাবেই এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়বে।”

থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় এরই মধ্যে দেশগুলো চীনের দিকে ঝুঁকছে। টিটিপি বাস্তবায়িত না হলে চীন ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে লাভবান হবে।

নিরাপত্তা উদ্বেগ

দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের নজর ছিল চীনের দিকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ ঘোষণা এবং আমদানির উপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ আরোপ করতে চেয়েছেন ট্রাম্প।

বিশ্ববাণিজ্যের অবস্থা দুর্বল হতে থাকার এ সময়টিতে এ ধরনের যে কোনও পদক্ষেপে এশিয়ার রপ্তানিকারকরাও যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এশিয়ার পুঁজিবাদী অর্থনীতি বিষয়ক ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ গার্থ লেদার বলেন, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এশিয়ার অর্থনীতির জন্য সবচে বড় ঝুঁকিটি অবশ্য ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নয় বরং পররাষ্ট্রনীতির দিক থেকেই বেশি।

নিরাপত্তা জোটগুলোর প্রতি ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছেন।  যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতির বিনিময়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে আরও অর্থ দেওয়া উচিত এবং চীন ও উত্তর কোরিয়াকে জবাব দিতে দেশদুইটির (জাপান ও দ. কোরিয়া) এমনকি নিজেদেরও পরমাণু সক্ষম হয়ে ওঠা উচিত বলে মনে করেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার প্রথম মেয়াদে এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ শুরু করার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিলারি ক্লিন্টন।

হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ওবামার পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ীই কাজ করবেন বলে ধারনা বিশ্লেষকদের। তবে কেউ কেউ মনে করেন হিলারি এক্ষেত্রে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে এবারের প্রচার সবচেয়ে বিভেদ পূর্ণ ছিল বলে মত অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের।

ফলে তারা মনে করছেন, এরই মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোতে যু্ক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা অনেকটাই নষ্ট হয়েছে, তা ভোটের ফল যাই হোক না কেন।

ফান্ড ম্যানেজার উইজডম ট্রি জাপানের প্রধাননির্বাহী জেসপার কোল বলেন, “বড় প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব বজায় রাখতে পারবে কিনা।”