২৯টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন এই সংস্থার মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বিবিসি বলেছে, গত এক বছরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
২০১৫ সালে বিশ্বে প্রতি দিন গড়ে ৫ লাখ সোলার প্যানেল বসেছে বলে আইইএ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া এই সময়ে শুধু চীনে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে দুটি করে বায়ুকল বসানো হয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য উৎস হিসেবে বায়ু, পানি ও সৌরশক্তিকে বোঝানো হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এসবের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়।
বর্তমানে ক্ষমতার দিক থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লাকে ছাড়িয়ে গেলেও উৎপাদনে এখনও পিছিয়ে আছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ।
কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে সারা বছর দিনের ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
অন্যদিকে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সর্বক্ষণ সূর্যালোক, বায়ু প্রবাহ প্রয়োজন হয়। ফলে ক্ষমতার সমান উৎপাদন এক্ষেত্রে কখনোই হয় না।
তারপরও এই অগ্রগতিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আইইএ’র নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল।
“আমরা বিশ্বের জ্বালানি বাজারে এক ধরনের পরিবর্তনের ধারা দেখছি, যাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি,” বলেন তিনি।
আইইএ বলছে, ২০২১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ৪২ শতাংশ বা ৮২৫ গিগাওয়াট বাড়তে পারে।
ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০১২ সালে ছিল ২১.৬ ট্রিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা ২০২০ সালে ২৬ ট্রিলিয়নে কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাটি বলছে, উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎস হিসেবে কয়লা এখনও প্রধান হলেও ২০৪০ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য উৎস তা ছাড়িয়ে যাবে।
বিশ্বে ২০১২ সালে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ কয়লা থেকে এসেছিল বলে ইআইএ’র তথ্য। তবে তাদের আভাস, ২০৪০ সাল নাগাদ তা ২৯ শতাংশে নেমে আসবে।
ইআইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে বিশ্বে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ২২ শতাংশের উৎস ছিল গ্যাস। নবায়নযোগ্য উৎসের অবদান ছিল ২২ শতাংশ।
আইইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৪৩৭ মেগাওয়াট। বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কমে আসার দিকটি দেখিয়ে আইইএ বলছে, পাঁচ বছরে আগে এরকমটি চিন্তাই করা যেত না। ব্যয় পরিবর্তনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই আশা করা যায়।
বায়ুকল ও সৌর বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের তিন-চতুর্থাংশ যোগান দেবে বলে মনে করছে আইইএ।
জলবিদ্যুতের পরিমাণ বাড়লেও তার গতি আগের তুলনায় ধীর বলে আইইএ জানিয়েছে।
ব্যয় কমে আসায় আগামীতে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন আশা দেখাচ্ছে সংস্থাটিকে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রসারের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর উদ্যোগও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে আইইএ।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের উপর কর আরোপ এবং ভারত, চীন ও মেক্সিকোর নীতি পরিবর্তনের বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বে এখন নেতৃত্বে ভূমিকায় চীন, দেশটিতে এই খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশ।
তবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সম্ভাবনার পুরোটুকুর ব্যবহার এখনও হচ্ছে না বলে মনে করেন আইইএ’র নির্বাহী পরিচালক বিরোল।
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্মগন কমিয়ে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাসে নবায়নযোগ্য উৎসে নির্ভরতা আরও বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি।