হিলারি, ট্রাম্প কাউকে না- চলছে এই প্রচারও

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ডেমক্রেট আর রিপাবলিকান শিবিরের ঘুম হারাম হয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের একদল ভোটার বলছেন, তারা হিলারি ক্লিনটন কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুই ‘শয়তানের’ কাউকেই ভোট দেবেন না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2016, 03:02 AM
Updated : 21 Oct 2016, 03:10 AM

নিজেদের সিদ্ধান্তকে জনপ্রিয় করতে তারা ‘ভোট নোবডি ২০১৬’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন, যা বিবিসি তুলে এনেছে।

এরই মধ্যে তাদের ফেইসবুক পেইজে লাইকের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ। টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কাউকে ভোট না দেওয়ার’ এ প্রচার সাড়া ফেলেছে।

হিলারি কিংবা ট্রাম্প কাউকে পছন্দ না করা সত্ত্বেও বেশিরভাগ আমেরিকান ৮ নভেম্বর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তুলনামূলক ‘কম শয়তান’কে ভোট দিয়ে আসবেন- এমন ধারণায় ছেদ টানতে চাইছে ‘ভোট নোবডি’র প্রচারকরা।

২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফেইসবুকে এই প্রচার শুরু করেন স্বঘোষিত ‘রাজনীতি আসক্ত’ ব্যক্তি ফ্রেড বার্নেট। ওই নির্বাচনের পর প্রচারে খানিকটা ভাটা পড়ে বলেও জানান তিনি।

এ বছরের মার্চে ফেইসবুকে নতুন উদ্যমে প্রচার শুরুর আগে ‘ভোট নোবডি’র ফেইসবুক পাতায় আড়াই হাজার ‘লাইক’ ছিল বলে জানান ফ্রেড।

এপ্রিল থেকে পেইজটিতে প্রকাশিত নানামাত্রিক রম্য পোস্টার, মেমে ও অন্যান্য পোস্ট অনেক তরুণেরই আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ।

এ পাতা থেকেই ৩৪ বছর বয়সী ফ্রেড ভোটের দিন সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

“আমার বিশ্বাস ওই দিন আরও ভালোভাবে কাটানোর সুযোগ আমাদের আছে। আমাদের পছন্দ করার স্বাধীনতা আছে, যার মধ্যে এদের কাউকে পছন্দ না করার স্বাধীনতাও যুক্ত।”

যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, যে জন‌্য কেন্দ্রে যেতে প্রার্থী থেকে শুরু করে সব দল ব‌্যাপক প্রচার চালায়।

ফ্রেড স্বীকার করেছেন, অনেকেই অভ্যাসের বশে ৮ নভেম্বর ভোট কেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্প ও হিলারিকে বাদ দিয়ে তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ভোট দেওয়ার চেয়ে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম, লেখালেখি, অ্যাক্টিভিজম এমনকি ফেইসবুকে পেইজ চালানোও ভালো, নাগরিকদের এমন পরামর্শও দেন ‘ভোট নোবডি’র উদ‌্যোক্তা ফ্রেড।

“মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সামান্য ফেইসবুক পেইজ দিয়ে আমি জনগণকে যেভাবে প্রভাবিত করতে পেরেছি, ভোটের মাধ্যমে সেভাবে প্রভাবিত করা যাবে বলে বোধ হয় না,” বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রতি অনাস্থা দিন দিন বাড়ছে বলে সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপেও দেখা গেছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের নিচে থাকা এক চতুর্থাংশ ভোটার হিলারি কিংবা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেয়েও বড় আকারের উল্কাপতন দেখতে বেশি আগ্রহী।

এসব কারণেও ‘ভোট নোবডি’র প্রচার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে কলোরাডোর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দ্য নোবডি টু থাউজেন্ড সিক্সটিন ডট ইউএস’ নামে ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। ওয়েবসাইটে মজার মজার কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে হিলারি ও ট্রাম্পকে চিহ্নিত করে, তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রচারকারী অনেকেরই আশা, ভোটাররা ৮ নভেম্বর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে হিলারি-ট্রাম্পের বাইরে অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দ্বিদলীয় সিস্টেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং তাদের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয় এমন স্থানীয় প্রার্থীদের বেছে নেবে।

“হিলারি বা ট্রাম্প কেউ আমার প্রতিনিধিত্ব করে না”, বলেন ‘ভোট নোবডি’ ফেইসবুক পেইজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ম্যাট নাগাশিমা।  

“আমরা চাই মানুষ এই সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন তুলুক। বলুক, হয়তো এর বাইরেও পছন্দ থাকতে পারে। বলুক, মার্কিন রাজনীতির চরিত্র এরকম হতে পারে না।”

কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর বয়সী এ শিক্ষার্থীর ভাষ্য, তরুণরা দুই দলের বাইরেই ভাবতে বেশি পছন্দ করছে।

“ক্যাম্পাসে হিলারির প্রচারের জন্য একটি বুথ আছে, কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ছাড়া কেউই সেখানে যায় না। এটা বোঝায়, কেউই আসলে এ ধরণের রাজনীতির প্রচারে আগ্রহী হয় না।

“এরপর আমি যখন ভোট নোবডির কথা তাদের বললাম, দেখলাম কি তুমুল আগ্রহ। মানুষ উদ্যম ফিরে পাচ্ছে এবং বলছে, এটা অসাধারণ। মজা হচ্ছে, এর মাধ্যমে আমরা রাজনীতি নিয়ে অনেক গভীর আলোচনা শুরু করলাম,” বলেন নাগাশিমা।

ডেমক্রেট ও রিপাবলিকানদের নিয়ে তরুণ প্রজন্মের অনাগ্রহ থাকলেও, সত্যি হচ্ছে এর বাইরে কিছু করার সুযোগও বেশ কম।

প্রধান এ দুদলের প্রার্থীদের প্রচারের ডামাডোলে বেশিরভাগ সময় আড়ালে থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন‌্য প্রার্থীরা।

এবারও হিলারি-ট্রাম্পের বাইরে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন, লিবারেটারিয়ান পার্টির গ‌্যারি জনসন, পার্টি অফ সোসালিজম অ‌্যান্ড লিবারেশনের গ্লোরিয়া এস্টেলা লা রিভা, রিফর্ম পার্টির রকি ডে লা ফুয়েন্টেস, কনস্টিটিউশন পার্টির ড‌্যারেল লেন ক‌্যাসল, স্বতন্ত্র ইভান ম‌্যাকমুলিন।

গ্যারি জনসন ও জিল স্টেইনের পক্ষে সমর্থন ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি থাকবে না বলে সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

উটাহ অঙ্গরাজ্যের রক্ষণশীল প্রার্থী ইভান ম্যাকমুলিন কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর নেভাদায় ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নামের পাশাপাশি থাকছে ‘উপরের কাউকে নয়’ পছন্দ করার সুযোগ।