হিলারি-ট্রাম্প শেষ বিতর্কে আলোচনায় পুতিন

ভোটের লড়াইয়ের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের শেষ মুখোমুখি বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2016, 05:23 AM
Updated : 20 Oct 2016, 05:47 AM

লাস ভেগাসের নেভাডা ইউনিভার্সিটিতে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে দেড় ঘণ্টার এ বিতর্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প অভিবাসন নীতি, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, গর্ভপাত, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া হিলারির ইমেইল, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড নিয়ে রাজনীতির মত বিষয়ে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন।

তবে বিতর্কে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে পুতিন প্রসঙ্গ এবং ভোটের ফল মানা-না মানা বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য।

হিলারি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ‘পুতিনের পাপেট’ বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। আর নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন কি না- সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ট্রাম্প বলেন তিনি ‘সাসপেন্স জিইয়ে রাখবেন’।  

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের বিতর্কে আগের দুই বারের চেয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হয়েছে বেশি। প্রথম ও দ্বিতীয় বিতর্কে দু্ই প্রার্থীই ব্যক্তিগত আক্রমণে বেশি মনোযোগী ছিলেন।

গত দুই বিতর্কের মত এবারও অধিকাংশ ভোটার হিলারিকেই এগিয়ে রাখছেন বলে জরিপের ফল দিয়েছে সিএনএন। 

বিতর্কের এক পর্যায়ে হিলারি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যেসব সাইবার হামলার শিকার হয়েছে, ট্রাম্প তার দায় পুতিনকে দিতে অস্বীকার করেছেন।

“তিনি (ট্রাম্প) সেনাবাহিনী ও বেসামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যারা আমাদের রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাদের চেয়েও পুতিনকে বেশি বিশ্বাস করেন”, বলেন হিলারি।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির উপর সাইবার হামলার জন্য রাশিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করে আসছে।

বিতর্কে পুতিনের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া করতে পারবেন, যা হিলারির পক্ষে সম্ভব নয়।

“তিনি (পুতিন) আমার সম্পর্কে চমৎকার সব কথা বলেছেন। অন্যদিকে হিলারির প্রতি তার কোনো সম্মান নেই, সম্মান নেই আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রতিও। আমি আপনাদের বলতে চাই, আমরা কিন্তু গভীর সঙ্কটে আছি।”

এ সময় হিলারি বলেন, “এর কারণ তার (পুতিন) কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার মত একজন পাপেট আছে।”

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া হয় তাৎক্ষণিক। হিলারিকে তিনি বলেন, “আসল পাপেট আপনি। প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে এবং ওবামাকে ধরাশায়ী করেছে পুতিন।”

হিলারি বলেন, বিজয়ী হলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে এমন বিচারক নিয়োগ দেবেন যিনি নারীর গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণ করবে। এর বিরোধিতায় ট্রাম্প বলেন, জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কারও নেই।

মার্কিন নাগরিকদের অস্ত্র বহনের অধিকারকে সমর্থন করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘দ্বিতীয় সংশোধনী’ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর এমন বিচারককে সুপ্রিম কোর্টে মনোনয়ন দেবেন তিনি।

ওই সংশোধনীতেই মার্কিন নাগরিকদের অস্ত্র রাখা ও বহনের অধিকার দ্য়ো হয়েছে। রিপাবলিকান পার্টি অস্ত্র বহনের অধিকারের পক্ষে কথা বলে এলেও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডেমক্রেট পার্টির অধিকাংশ সদস্য নতুন একটি ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন’ করার পক্ষে।

ডেমক্রেট প্রার্থী হিলারি বিতর্কে বলেন, তিনি দ্বিতীয় সংশোধনীর বিপক্ষে নন; তবে অস্ত্রের কারণে যেন শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেজন্য এর সঙ্গে নতুন বিধান যুক্ত করতে চান। 

“মানুষের জীবন বাঁচানো এবং দ্বিতীয় সংশোধনী বজায় রাখা এ দুটোর মধ্যে আমি কোনো বিরোধ দেখি না।”

যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান প্রার্থীর হাতে যাওয়া নিরাপদ হবে কি না সে প্রশ্ন তুলে হিলারি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রের গোপন সংকেত ট্রাম্পের হাতে যাক, এটা তিনি চান না।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির বেশ কয়েকটি অভিযোগের মধ্যে জনমত জরিপে ট্রাম্পের সমর্থন পড়তির দিকে। শেষ বিতর্কের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষয়িষ্ণু জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।

সত্তর বছর বয়সী এ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন; পাশাপাশি তাকে নির্বাচনে হারাতে কারচুপির আশ্রয় ন্য়ো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোটের আগেই।

বিতর্কের সঞ্চালক ফক্স নিউজের উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেস ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, নির্বাচনে হারলে তিনি তা মেনে নেবেন কি না?

এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “আমি তোমাকে সাসপেন্সের মধ্যেই রাখতে চাই।”

লাস ভেগাসের এ বিতর্কই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে হওয়া শেষ আনু্ষ্ঠানিক মুখোমুখি বিতর্ক।

আগামী ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেখানেই নির্ধারিত হবে, কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট।