কলম্বিয়ার গণভোটে ফার্ক শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান

পাঁচ দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে ফার্ক গেরিলাদের সঙ্গে কলম্বিয়া সরকারের করা ‘ঐতিহাসিক’ শান্তিচুক্তি প্রত‌্যাখ‌্যান করেছে দেশটির ভোটাররা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2016, 04:06 AM
Updated : 3 Oct 2016, 04:06 AM

রোববার এ বিষয়ে গণভোটে চুক্তির বিপক্ষে ৫০.২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। 

চার বছরের আলোচনার পর গত সপ্তাহে দ্য রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়ার (ফার্ক) নেতা টিমোশেনকো ও মধ্য-ডানপন্থী সরকারের প্রধান ম্যানুয়েল সান্তোস চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়িত হতে জনগণের ‘সম্মতি’র দরকার ছিল; সে জন্যই গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম; মাত্র ৩৭ শতাংশ। ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যালটের মধ্যে ৬৩ হাজারেরও কম ভোটের ব্যবধানে শান্তিচুক্তিটি ‘প্রত্যাখ্যাত’ হয়।

ভোটে অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকার টেলিভিশনে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছিল; আয়োজন করেছিল কনসার্ট ও শান্তি র‌্যালির। ধারণা করা হচ্ছিল, শান্তিচুক্তির পক্ষেই জন রায় আসবে।

কিন্তু সব ছাপিয়ে জনগণ চুক্তি বাতিলের পক্ষেই রায় দিয়েছে; যা শান্তি প্রক্রিয়াকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গণভোটের ফল ঘোষণার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সান্তোস জনরায় মেনে নিলেও শান্তির জন‌্য চেষ্টা অব‌্যাহত রাখার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ফার্ক ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান ‘যুদ্ধবিরতি’ অব্যাহত রেখেই মধ্যস্থতাকারীদের দ্রুত কিউবা গিয়ে ফার্ক নেতাদের সঙ্গে পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

“আমি হাল ছাড়ছি না। দায়িত্ব ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি শান্তির জন্য কাজ করে যাব; কেননা এই পথেই আমাদের শিশুদের জন্য একটি ভাল দেশ রেখে যাওয়া সম্ভব।”

ফার্ক নেতা টিমোশেনকোও বলেছেন, তার দল এখনও যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

গেরিলা এ দলটি এর আগে ৫২ বছরের যুদ্ধ থামিয়ে অস্ত্র সমর্পণ ও ছয় মাসের মধ্যে প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।

সমালোচকদের দাবি, শান্তিচুক্তিতে ফার্কের গেরিলা বাহিনীকে বেশি ‘ছাড় দেওয়া হয়েছে’ বলে মনে করছে কলম্বিয়ার জনগণ। চুক্তিতে জেলে থাকা অনেক গেরিলাকেই ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মানুষকে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

শান্তিচুক্তির বিরোধিতাকারীদের অন্যতম সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ফান্সিসকো সান্তোস বিবিসিকে বলেন, আরও ভাল চুক্তি করার জন্যই জনগণ এ রায় দিয়েছে।

“ন্যায়বিচারের সঙ্গে শান্তির জয়ের জন্যই ‘না’-এর এ জয়। এ জয় ক্ষমা ও পুনর্মিলনের সঙ্গে শান্তির জয়। এ গণরায় আরও স্থিতিশীল শান্তি, যেখানে আমাদের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে তাকে ত্বরান্বিত করবে,” বলেন তিনি।

চুক্তি নিয়ে এর আগে প্রেসিডেন্ট সান্তোস সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তি ছাড়া যুদ্ধের সমাপ্তি টানার আর কোনো পরিকল্পনা নেই।

২০১০ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে সান্তোস যুদ্ধ বন্ধে অগ্রসর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন; যে যুদ্ধ দেশটির অন্তত ৮০ লাখ লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে।

সান্তোসকে এখন ‘কঠিন সময়’ পার করতে হবে বলে মনে করছেন বিবিসির আমেরিকা বিষয়ক সম্পাদক লিওনার্দো রোকা।

তিনি বলেন, “অন্য কোনো বিকল্প না থাকার ব্যাপারে সান্তোস যে কথা বলেছিলেন, এখনও যদি তিনি তাতে অটল থাকেন তাহলে দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধবিরতি বাতিল হয়ে যেতে পারে; নতুন করে দামামা বেজে উঠতে পারে।”