অবশ্য পাকিস্তান বলছে, ভারতের দাবি অতিরঞ্জিত। সীমান্তে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী জাম্মু ও কাশ্মিরের ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করে দুই কিলোমিটার ভেতরে ‘পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিদের’ ঘাঁটিতে তারা অভিযান চালায়।
সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যৌথ ওই সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সেনা অভিযান বিষয়ক মহাপরিচালক লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং বলেনম “আমাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের পরিকল্পনারত সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।”
‘নিজ দেশে জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রণবীর সিং বলেন, “ জাম্মু ও কাশ্মির এবং আমাদের অন্যান্য রাজ্যের বড় শহরগুলোতে অনুপ্রবেশ করে সন্ত্রাসী হামলার জন্য লাইন অব কন্ট্রোল জুড়ে কয়েকটি জঙ্গি দল অবস্থান নিয়েছে, এমন সুনির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য খবরের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে ওইসব জঙ্গিঘাঁটিতে অভিযান পরিচালনা করেছে।”
ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এটি ছিল ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই আঘাত করা হয়েছে, আশেপাশে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অভিযানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি ও জঙ্গি মদদদাতা হতাহত হয়েছে বলেও তাদের ভাষ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাকর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনডিটিভি-র খবরে বলা হয়, বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অভিযান চলে। হেলিকপ্টারের পাশাপাশি পদাতিক সেনারাও তাতে অংশ নেয়।
ভারতীয় মন্ত্রিপরিষদের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর।
অন্যদিকে, পাক সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, জঙ্গি ঘাঁটিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। ‘মিথ্যা প্রভাব বিস্তারের জন্য’ ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করছে।
‘বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের লাইন অব কন্ট্রোলে কোনো ধরনের প্ররোচনা ছাড়াই ভারতীয় সেনাদের গুলি বর্ষণে পাকিস্তানের সেনারা নিহত হয়েছে’, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে লড়াই শুরু হয় এবং ছয় ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চলে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ একে ‘বিনা উস্কানিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নগ্ন আগ্রাসণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব খর্ব করার যে কোনো ধরনের অপচেষ্টা ব্যর্থ করার সক্ষমতা আমাদের সেনাবাহিনীর আছে।”
গত ১৮ সেপ্টেম্বর লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে চার ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’র হামলায় ১৮ সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী দেশ দুইটির মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
ভারতের দাবি, পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে।
ওই হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মোদী হামলার যোগ্য জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমি দেশবাসীকে এই হামলার পেছনে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
ভারত ইতোমধ্যে আসন্ন ইসলামাবাদ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ, ভূটান এবং আফগানিস্তানও সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর আঞ্চলিকভাবে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার হুমকিতে রয়েছে পাকিস্তান।