পাকিস্তানের পার্লামেন্টে হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন বিল পাস

পাকিস্তানে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ  সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ে নিবন্ধনের মাইলফলক বিল পাস করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 03:04 PM
Updated : 27 Sept 2016, 03:16 PM

হিন্দু নারীদের অধিকার রক্ষায় তাদের বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন পাসের জন্য সমাজকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।

সমাজকর্মীরা বলেন, যেহেতু পাকিস্তানের হিন্দু নারীদের বিবাহ নিবন্ধন হত না, তাই তারা ভয়ঙ্কর রকমভাবে অপহরণ, জোর করে ধর্মান্তর ও ধর্ষণের শিকার হত। বিচার চাইতে আদালতে প্রমাণ হিসেবে তাদের হাতেও কিছু থাকত না।

বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্কের ১০ মাস পর সোমবার জাতীয় সংসদে তা অনুমোদন পায়। পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা দ্রুত বিলটি আইনে পরিণত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানে মোট জনগোষ্ঠির এক দশমিক ৬ শতাংশ হিন্দু।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর দেশটির হিন্দুদের বিবাহ নিবন্ধনে কোনও আইন প্রণয়ন হয়নি।

যদিও একটি ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী দেশটির খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠির বিবাহ নিবন্ধন হত।

তবে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ প্রথম হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রচলন করে। এরপর পাঞ্জাব, খাইবার-পাকতুনখাওয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশ কেন্দ্রীয় সরকারকে হিন্দু বিবাহ আইন করার পক্ষে সম্মতি দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিল গত মার্চ থেকে ঝুলে থাকার পর শেষ পর্যন্ত তা পাস হল।

হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন বিলে বিয়ের সর্বনিম্ম বয়স ১৮ ধরা হয়েছে। এছাড়া অন্য ধর্মের লোজজনকে বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের ১৮ এবং নারীদের ১৬ বছর বয়স হতে হবে।

বিলে, সর্বনিম্ম বয়সের আগে বিবাহ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার রুপি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

 জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২১ শতাংশ নারীদের প্রথম বিবাহ তাদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়।

পাকিস্তানে হিউম্যাস রাইটস কমিশিনের প্রধান জোহরা ইউসুফ বলেন, বিবাহের প্রমাণপত্র হিন্দু নারীদের সুরক্ষায় বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে।

“একবার বিবাহ নিবন্ধন হলে তাদের (হিন্দু নারীদের) অন্তত সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার পাওয়া নিশ্চিত হবে।”

বিশেষ করে বিবাহের পর স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবা নারীদের বড় ধরনের সমস্যায় পতিত হতে হয় বলে মন্তব্য করেন জোহরা।

তিনি বলেন, “বিবাহ নিবন্ধন না থাকায় সরকারী কল্যান সুবিধা পাওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তার বিবাহ হওয়ার প্রমাণ ওই সব নারীদের হাতে থাকে না।”

নতুন আইনে স্বামীর মৃত্যুর ছয় মাস পর বিধবা নারীকে পুনরায় বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আইনটিতে তালাকের বিধানও রাখা হয়েছে। তালাকের ক্ষেত্রে হিন্দু নারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যেমন:- অবহেলার শিকার হলে, স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে অথবা ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হলে হিন্দু নারীদের তাদের স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

অপহরণ ও জোর করে বিবাহের ক্ষেত্রে আরও কঠোর আইন প্রয়োজন বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মী জোহরা।