সিএনএন/ওআরসি’র এক জরিপে বিতর্ক দেখা দর্শকের ৬২ শতাংশ হিলারি আর ২৭ শতাংশ ট্রাম্পকে জয়ী বলে রায় দিয়েছেন।
সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কের হেম্পস্টেডে হোফসট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে ৯০ মিনিটের মুখোমুখি বিতর্ক হয়। এতে দুই প্রার্থী অভিবাসননীতি, ইরাক যুদ্ধ, পরমাণুঅস্ত্র, পররাষ্ট্র নীতিসহ চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে উত্তপ্ত বাকযুদ্ধে নামেন।
বিতর্ক শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যে ৫২১জন দর্শকের মধ্যে জরিপ চালায় সিএনএন/ওআরসি। এতে অংশ নেয়া দুই-তৃতীয়াংশ নিবন্ধিত ভোটার জানিয়েছেন, হিলারি তার বক্তব্য ট্রাম্পের চেয়ে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।
২০১২ সালে হওয়া একই ধরনের বিতর্কে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিট রমনি ও বারাক ওবামার মধ্যেও পার্থক্য এ রকম ছিল বলে জানিয়েছে সিএনএন।
সেবারের বিতর্কে মিট রমনি ‘প্রভাব বিস্তার’ করলেও শেষ পর্যন্ত মার্কিন জনগণের ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামাই শেষ হাসি হাসেন।
এবারের বিতর্ক শেষে উদ্বিগ্ন ভোটারদের ৫৭ শতাংশকে হিলারি প্রভাবিত করতে পেরেছেন বলে সিএনএনের জরিপে উঠে এসেছে। ট্রাম্প প্রভাবিত করতে পেরেছেন ৩৫ শতাংশকে।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৬ শতাংশ বলেছেন- হিলারি ‘শক্তিশালী নেতা’; ট্রাম্পকে এ অভিধা দিয়েছেন ৩৯ শতাংশ।
বিতর্কে ডেমোক্রেট প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে চেয়েছেন জাতিগত বিদ্বেষ, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আচরণ এবং কর খেলাপের মত অভিযোগ এনে।
অন্যদিকে আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষের মন্ত্রিত্বের দিনগুলোতে কাজের সমালোচনা করেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে হিলারির আন্তরিকতা নিয়ে।
হিলারি ও ট্রাম্পের এ টেলিভিশন বিতর্ক ১০ কোটি দর্শক সরাসরি দেখেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিতর্কে দুই প্রার্থীর মধ্যে কাকে বেশি আন্তরিক ও খাঁটি মনে হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিএনএন/ওআরসির জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ দর্শকের রায় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রার্থী। ট্রাম্পকে আন্তরিক বলছে ৪০ শতাংশ।
তবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের ক্ষেত্রে ট্রাম্প হিলারিকে ছাপিয়ে গেছেন। ৫৬ শতাংশ দর্শকের মতে, প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে ট্রাম্প বেশি সময় দিয়েছেন। হিলারির প্রতি এ মুগ্ধতা মাত্র ৩৩ শতাংশের।
সিএনএন বলছে- জরিপে দেখা গেছে, হিলারি-ট্রাম্পের বিতর্ক দেখতে আগ্রহী বেশিরভাগ দর্শকই ছিলেন ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক।
তবে নিরপেক্ষ দাবি করা ভোটাররাও বিতর্ক শেষে হিলারিকে বিজয়ী হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের ৫৪ শতাংশ হিলারিকে আর ৩৩ শতাংশ ট্রাম্পকে জয়ী বলে মনে করেন।
তবে জরিপে অংশ নেয়া ৪৭ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, এই বিতর্ক তাদের ভোটে প্রভাব ফেলবে না।
অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ বলছে, বিতর্ক শেষে তারা হিলারিকে পছন্দ করা শুরু করেছেন। ১৭ শতাংশের সমর্থন ট্রাম্পের দিকে ঘুরেছে।
পুরো বিতর্ক দেখেছেন এমন ভোটারদের ৬২ শতাংশ বলছেন, পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে হিলারিকে ট্রাম্পের চেয়ে বেশি দক্ষ বলে মনে হেয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন মাত্র ৩৫ শতাংশ।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় হিলারির নীতির প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া ৫৪ শতাংশ ভোটার। তবে ৪৩ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্পের হাতেই বিশ্ব থেকে সন্ত্রাস দমন সম্ভব।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী এ দু’জনের পার্থক্য অবশ্য বেশ সূক্ষ্ণ। এ বিষয়ে ৫১ শতাংশ হিলারিকে আর ৪৭ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি তাদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৫ শতাংশই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ‘অযোগ্য’ বলে মনে করেন। বিপরীতে ৪৩ শতাংশ মনে করেন, এ পদের জন্য ট্রাম্পই উপযুক্ত।
কোনো দলের নিবন্ধিত নন, এমন ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া যৌক্তিক না অযৌক্তিক- এই বিভাজন বেশ প্রকট। ৪৯ শতাংশ নিরপেক্ষ ভোটার মনে করেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে অযোগ্য, বিপরীত রায় ৫০ শতাংশের।
৬৭ শতাংশ দর্শক ট্রাম্পের উপর হিলারির আক্রমণ এবং রিপাবলিকান প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা মেনে নেন। হিলারির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের করা বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা সমর্থন করেন ৫১ শতাংশ ভোটার।
এনবিসি টিভির লেস্টর হল্ট বিতর্ক সঞ্চালনা করেন। চূড়ান্ত ভোটের আগে আরও দুটি বিতর্কে দেখা যাবে হিলারি ও ট্রাম্পকে।
প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থীর বিতর্ক নিয়ে সরগরম ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও।
টুইটার জানিয়েছে, বিতর্কের সময় ৬২ শতাংশ ব্যবহারকারী ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করে টুইট করেছেন, হিলারির নাম লিখেছেন ৩৮ শতাংশ ব্যবহারকারী।
অন্যদিকে, রয়টার্সের সোস্যাল সেন্টিমেন্ট ট্র্যাকারেও বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করছেন।
৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হওয়া সর্বশেষ জরিপগুলোতে দুই প্রার্থীর পক্ষে কাছাকাছি জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে।
বিবিসির সর্বশেষ জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ সমর্থনের কথা বলা হয়েছে।