ইউরোপে বোরকা, নেকাব, বুরকিনি বিতর্ক

বেশ কয়েকটি দেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গি হামলা জর্জরিত ইউরোপে আবার নারীদের বোরখা, নেকাব এবং বুরকিনি পরা নিয়ে কড়াকড়ির পদক্ষেপ বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 25 August 2016, 02:58 PM
Updated : 25 August 2016, 05:44 PM

ব্রিটেন, জার্মানিতে বোরকা নিষিদ্ধের দাবি সাম্প্রতিক সময়ে আরও জোরাল হচ্ছে। কিন্তু এ পদক্ষেপ অত্যাচার, অবিচার বলেও মত অনেকেরই।

বোরকা, নেকাব, বুরকিনি নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে ইউরোপের দেশগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

যে সব দেশ এ তিন ধরনের পর্দা প্রথা নিষিদ্ধ করেছে আর যেসব দেশে এগুলো নিষিদ্ধ করা নিয়ে আলোচনা চলছে সেগুলোর তালিকা:

অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়ার রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা বোরকা নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বোরকা, নেকাব কিংবা বুরকিনি পরা নারীরা সমাজের সঙ্গে একাত্ম হতে পারছেনা বলে অভিমত তাদের।

সাংবিধানিক আইনের আওতায় এ ধরনের পর্দা নিষিদ্ধ করতে চান অস্ট্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু অস্ট্রিয়ার সুপ্রিম কোর্ট অব জাস্টিস বলছে, বোরকা বা নেকাব নিষিদ্ধ করার কোনও আইন  নেই।

তবে সম্প্রতি নেকাব পরার অপরাধে নোটারি অফিসের এক নারীর চাকরি চলে যাওয়ার মামলায় আদালত নিয়োগকর্তার সঙ্গেই একমত  পোষণ করেছে।

বেলজিয়াম

বেলজিয়াম ২০১১ সালেই বোরকা এবং নেকাব নিষিদ্ধ করেছে এবং ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত বোরকা কিংবা নেকাব পরার কারণে ৬০ জন নারী বিচারের মুখোমুখি হয়েছে।

দেশটিতে বহু পৌর সুইমিং পুলে নারীদের বুরকিনি পরাও নিষিদ্ধ। তবে সমুদ্র সৈকতে বুরকিনি নিষিদ্ধ নয়।

বেলজিয়ামের কট্টর ডানপন্থি দল এন-ভিএ বুরকিনি পুরোপুরিই নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। ফরাসিভাষী দল লিবারেল পার্টিও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

চেক রিপাবলিক

চেক রিপাবলিকে বোরকা এবং বুরকিনি নিষিদ্ধ। ২০১৩ সালে প্রাগের একটি স্কুলে দুই শিক্ষার্থীর হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়।

ওই দুইজনের একজন এ বছর  স্কুলটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং স্কুলের ওই পদক্ষেপের জন্য ক্ষমা দাবি করেছে। তবে মামলার রায় এখনও হয়নি।

২০১৩ সালে একটি শহরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের এক শিক্ষকের হিজাব পরা নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বিক্ষোভও করে। তবে অন্যান্য অভিভাবক এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমর্থনের কারণে ওই শিক্ষক চাকরিচ্যুত হননি।

ফ্রান্স

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সেই ২০১০ সালে প্রথম  জনসম্মুখে নারীদের বোরকা এবং নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়।

এ মুহূর্তে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছে বুরকিনি। মুসলিম নারীদের সাঁতারের পোশাক বুরকিনি নিষিদ্ধ করা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের মধ্যেই ফরাসি পুলিশকে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছে। বুরকিনি পরার জন্য সমুদ্রসৈকেত  নারীদের জরিমানা করছে পুলিশ।

গত মাসে নিস শহরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বুরকিনি নিষিদ্ধ করা ‘অত্যন্ত জরুরি’হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শহরটির মেয়র।

কিন্তু বুরকিনি নিষিদ্ধ করা নিয়ে ফ্রান্সে বিতর্ক বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন সে দেশে মুসলিমদের সংগঠন। তারা এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থও হয়েছে।

নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডসে এক দশক ধরে বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিতর্ক চললেও সাংবিধানিক ও প্রায়োগিক বাধার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

২০১৫ সালে দেশটিতে কয়েকটি ক্ষেত্রে নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়। যেমন: স্কুল, বিমানবন্দর, আদালত, জনপরিবহন এবং সরকারি ভবনগুলোর প্রবেশপথে নিরাপত্তাজনিত কারণে নেকাব পরা নিষিদ্ধ হয়।

রাস্তাঘাটে কিংবা সৈকতে নেকাব নিষিদ্ধ নয়। তবে মটরসাইকেলের হেলমেটের মত মুখ ঢাকা জিনিসও নেদারল্যান্ডসে নিষিদ্ধ।

স্পেন

স্পেনে ২০১০ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি নগরীতে বোরকা এবং মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ করা হয়। অন্যান্য স্পেনিশ শহরেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।

তবে ২০১৩ সালে স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট এ নিষেধাজ্ঞা উল্টে দেয়। টাউন হলগুলোর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার এখতিয়ার নেই বলে জানায় আদালত।

স্পেনে দেশব্যাপী বোরকা বা নেকাব নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে আলোচনাও খুব একটা হয়না। দেশটিতে খুব কম নারীই এ ধরনের পোশাক পরেন।

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডে একটি দল বোরকা নিষিদ্ধের বিষয়টি দেশের ভোটারদের সামনে নিয়ে আসার একটি পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগুচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ইতালিভাষী একটি অঞ্চলে ২০১৩ সালে বোরকা নিষিদ্ধ হয়েছে। এবছর  কার্যকর হয়েছে সে নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে তাকে জরিমানা গুণতে হবে।

জুরিখের বামপন্থি স্যোশাল ডেমোক্র্যাটস দলের এক রাজনীতিবিদ এ মাসে বলেছেন, তিনিও চান আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হোক। কারণ, উদারনৈতিক সমাজে সবারই তাদের মুখমন্ডল খোলা রাখা উচিত।

তবে এ মন্তব্যের কারণে ওই রাজনীতিবিদ তার নিজ দলের সদস্যদেরই সমালোচনার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে সুইস গণমাধ্যম।