শিশুদেরকে দিয়ে বোমা হামলা বাড়ছে

আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে শিশুদেরকে দিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর কৌশল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2016, 04:25 PM
Updated : 23 August 2016, 04:25 PM

ইরাক, নাইজেরিয়ার পর সর্বশেষ শিশু হামলাকারীর বোমা হামলার শিকার হয়েছে তুরস্ক।

ইরাকের কিরকুকে পুলিশের হাতে ধরা পড়া ১৬ বছরের কম বয়সী   এক কিশোরের শার্ট খুলে তার শরীরে বাঁধা অবস্থায় দুই কেজি বিস্ফোরক খুঁজে পাওয়া যায়।

রোববারের এ ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তুরস্কের সীমান্ত শহর গাজিয়ানতেপে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ঘটনাস্থলে ৫১ জন এবং হাসপাতালে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়।

প্রাথমিক তদন্তে আত্মঘাতী হামলাকারী ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী একটি শিশু ছিল বলে জানা গেছে।

আফগানিস্তানে তালেবান জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার করেছে।

২০১২ সালে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর কাবুলে নেটোর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। দুই বছর পর আরেক কিশোর কাবুলে ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।

গবেষক ও কর্মকর্তারা বলেন, ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো এখন হামলার এ কৌশল ব্যবহার শুরু করেছে এবং আত্মঘাতী হামলায় অধিক হারে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করেছে।

এবছর প্রথম ছয় মাসে শুধু পশ্চিম আফ্রিকায় ৩৮টি শিশুকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম গৃহহীন শিশুদের খাবারের লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে অথবা অপহরণ করে নিয়ে আসা বালিকাদের জোর করে আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহার করে।

ইরাক ও সিরিয়ার সমাজকর্মীরা জানান, ইসলামিক স্টেট (আইএস) যেসব শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় ওই সব শহরের শিশুদের ধরে নিয়ে গিয়ে বা একটি পুরো পরিবারকে দলের সদস্য বানিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তারা ওই সব শিশুকে নিজেদের মতবাদের দীক্ষা দেয়।

আইএস-র প্রচার মূলক ভিডিওগুলোতে এইসব শিশুকে বিশেষভাবে দেখানো হয়।

ইউনিসেফের আঞ্চলিক মুখপাত্র জুলিয়েত্তে তুমা বলেন, “পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জঙ্গি দলে শিশু নিয়োগ বেড়ে গেছে।”

“শিশুদের তাদের বয়সের তুলনায় অনেক বেশি বিপদজনক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের ভারী অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, জঙ্গি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের প্রবেশমুখের চেকপয়েন্টগুলোতে পাহারার কাজে লাগানো হয়, গুপ্তঘাতক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।”

কিরকুকে পুলিশের হাতে ধরা পড়া ওই কিশোরের বাড়ি ইরাকের মসুলে। ইরাকের মসুলে এখনও শক্ত ঘাঁটি গেড়ে আছে আইএস।

আইএস বিষয়ে ইরাক সরকারের উপদেষ্টা হিশাম আল-হাশিমি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে ক্রামগত হারের কারণে আইএস আবারও তাদের হ্যাভেনস ইয়ুথ ব্রিগেড সক্রিয় করেছে।

তিনি বলেন, “কিশোর বিশেষ করে যারা যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার অথবা যুদ্ধে প্রিয় মানুষদের হারিয়েছে তাদের আত্মঘাতী মিশনে যেতে প্ররোচিত করা অধিক সহজ।”

“এছাড়া, নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় কিশোরদের দিকে কম নজর দেয় এবং কম সন্দেহজনক মনে করে।”

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএস-র ঘাঁটি থেকে পালিয়ে আসা শিশুদের বর্ণনায় কিভাবে তাদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে অথবা কিভাবে শরীরের বাঁধা বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটাতে হয় তা উঠে এসেছে।

এপ্রিলে প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর নাইজেরিয়া, ক্যামেরন, নাইজার ও চাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় শিশুদের ব্যবহার চারগুণ বেড়েছে।

মার্চে ক্যামেরনে বিস্ফোরক বেল্টসহ ধরা পড়া নাইজেরিয়ার ১২ বছর বয়সী এক বালিকা পুলিশকে বলেছে, এক বছর আগে বোকো হারাম জঙ্গিরা তার গ্রামে হামলা চালায়। ওই সময় তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের হাতে থাকা তথ্যে আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশই মেয়েশিশু।