কাবুলে বোমায় নিহত ৮০, আইএসের দায় স্বীকার

আফগানিস্তানের কাবুলে একটি সমাবেশে জোড়া বোমা হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত এবং ২৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস।

>>রয়টার্স
Published : 23 July 2016, 01:19 PM
Updated : 23 July 2016, 06:48 PM

শনিবার কাবুলের দেহ মাজাং স্কয়ারে দেশটির সংখ্যালঘু শিয়া মতাবলম্বী হাজারা জনগোষ্ঠীর সমাবেশে এই হামলা হয়।

টেলিভিশনে প্রচারিত ঘটনাস্থলের একটি ভিডিওচিত্রে রক্তে ভেজা রাস্তায় অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে হামলায় ৮০ জন এবং ২৩১ জন আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার পর একক ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনাগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে এই হামলা।

এর আগে দেশটিতে হাজারা জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছিল ২০১১ সালে, আশুরা উপলক্ষে কাবুলে শিয়া উৎসবে ওই হামলায় ৫৫ জনের মৃত্যু হয়। সে হামলার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানের উগ্রপন্থি সুন্নি গোষ্ঠী লস্কর-ই-জাংভি।

আইএসের পক্ষে শনিবারের হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠীর মুখপাত্র আমাক- এ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কাবুলে শিয়াদের একটি জমায়েতে দুইজন যোদ্ধা বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।”

হামলার নিন্দা জানিয়ে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ই-মেইলে গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ হামলার পেছনে তাদের হাত নেই।

“আফগানিস্তানের জনগণকে বিভক্ত করে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা আমরা কখনও ঘটাব না।”

এই হামলাকে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ উস্কে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বলছে তারা।

হামলার পর এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বলেন, “সুযোগ সন্ধানী সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভকারীদের দলে মিশে গিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। হামলায় আমাদের দেশের অনেক সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন।”

আফগান সরকার তুর্কমেনিস্তান থেকে কাবুলে বিদ্যুৎ আনার জন্য নতুন একটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বসানোর পরিকল্পনা করেছে।

হাজারা জনগোষ্ঠীর দাবি, সরকারের পরিকল্পনায় বামিয়ান ও ওয়ারদাক প্রদেশ উপেক্ষিত হয়েছে।

আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ ফার্সি ভাষী হাজারা জনগোষ্ঠী মূলত ওই দুটি প্রদেশেই বসবাস করে।

বামিয়ান ও ওয়ারদাক প্রদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন বসানোর দাবিতে শনিবার কয়েক হাজার মানুষ কাবুলে সমবেত হয়।

বিক্ষোভ-সমাবেশ উপলক্ষে সরকার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ভিড়ের মধ্যে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাবিরা জান রয়টার্সকে বলেন, “আমরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিলাম, এমন সময় আমি একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। তারপর সবাই পালাচ্ছিল চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল।”

এ সময় মাটিতে রক্তাক্ত অনেককে পড়ে থাকতে দেখেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তখন সাহায্য করার কেউ ছিল না।”

এ হামলায় আফগানিস্তানে একদিন জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ঘানি। হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা একে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

হামলা তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।