‘আগে ব্রেক্সিট, পরে বাণিজ্য আলোচনা’: যুক্তরাজ্যকে ইইউ ট্রেড কমিশনার

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোন ধরনের দরকষাকষিমূলক আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছেন জোটের শীর্ষ বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তা সিসিলিয়া মেলস্ট্রম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2016, 08:05 AM
Updated : 1 July 2016, 08:05 AM

বৃহস্পতিবার বিবিসি নিউজনাইটকে তিনি বলেন, “প্রথমে তাদের বেরিয়ে যেতে হবে, পরে আলোচনা।”

২৩ জুন যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কী না তা নিয়ে হওয়া গণভোটে ‘বিচ্ছেদপন্থীরা’ বিজয়ী হওয়ার পর ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে।

এরই মধ্যে ইইউ’র ট্রেড কমিশনার মেলস্ট্রম এ মন্তব্য করলেন।

“ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ‘তৃতীয় দেশ’ হিসেবে গণ্য হবে। তখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবসা চলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত জোটের সঙ্গে তাদের নতুন চুক্তি সম্পন্ন না হয়।”

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, দুই বা একাধিক দেশ নিজেদের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী একে অপরকে সুবিধা দিতে পারবে। চুক্তি না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্যারিফ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।  

সাত বছরের আলোচনা শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সর্বশেষ কানাডার সঙ্গে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিটি এখন ইইউভুক্ত দেশগুলোর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। চুক্তিটি পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও দুই-এক বছর লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ’র ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি মেলস্ট্রম। এই ট্রেড কমিশনার বলেন, রাজনৈতিকভাবে ‘বিচ্ছেদ’ এর আগ পর্যন্ত নতুন সম্পর্ক নির্ধারণ করা যাবে না।

“আলোচনা আসলে দুটো হবে; প্রথমত যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে, পরে নতুন সম্পর্ক নিয়ে”, বলেন তিনি।

নিয়ম অনুযায়ী, গণভোটের ফল প্রকাশের পর ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে ‘আর্টিকেল ফিফটি’ চালু করতে হবে। ক্যামেরনের স্থলাভিষিক্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী ‘দ্রুতই’ সে কাজে হাত দেবেন বলেও আশা মেলস্ট্রমের।

“গণভোটের রায়কে মেনে নিতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। কিন্তু তারপরও সত্যিটা হচ্ছে এর কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। আগে প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে, যা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দ্রুতই শুরু করবেন বলে আমার আশা। এরপর বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।”

ইইউ’র আইন অনুযায়ী, জোট কোনভাবেই সদস্য একটি দেশের সঙ্গে পৃথক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা করতে পারে না। এজন্যই ‘নতুন আলোচনার আগে’ যুক্তরাজ্যকে ‘বেরিয়ে যেতে হবে’ বলে জানালেন সিসিলিয়া মলস্ট্রেম।

একইসঙ্গে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইইউ’র বাইরে থাকা দেশের সঙ্গে নিজস্ব কোন বাণিজ্য চুক্তিতে থাকতে পারবে না।

যার অর্থ হলো- ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত (অন্তত দুই বছর) যুক্তরাজ্য ইইউ’র বাণিজ্য সম্পর্কের মধ্যেই আটকে থাকবে; যা ব্রেক্সিট নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে ধারণা করছে বিবিসি।

ইইউ ছাড়ার পর নতুন চুক্তি পর্যন্ত ডব্লিউটিও’র বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ব্যবসা করতে গেলে যুক্তরাজ্যের চাকরির বাজার ধসে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়াটা ইইউ’র জন্যও অর্থনৈতিক ক্ষতি বয়ে আনবে বলে মনে করেন মেলস্ট্রম।

“হ্যাঁ, অবশ্যই ক্ষতি ডেকে আনবে; কিন্তু ভোটের রায় পরিস্কার। ঐতিহ্যগতভাবে মুক্ত বাণিজ্য দর্শনের সমর্থক যুক্তরাজ্য জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় আমিও বেশ দুঃখ পেয়েছি”, বলেন তিনি।