ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে হামলায় জাতীয় শোক পালন

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের প্রধান বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2016, 07:18 AM
Updated : 30 June 2016, 07:20 AM

বিবিসি বলছে, এ ঘটনায় বুধবার একদিনের জাতীয় শোক পালন করেছে তুরস্ক।

মঙ্গলবার রাতে তিন হামলাকারী ট্যাক্সিযোগে এসে বিমানবন্দরের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের পাল্টা গুলির মুখে হামলাকারীরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেদের উড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিক।

নিহতদের মধ্যে ৩৭ জনের জাতীয়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জন তুর্কি, পাঁচজন সৌদি, দুইজন ইরাকি নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া চীন, জর্দান, তিউনিসিয়া, ইরান ও ইউক্রেইনের একজন করে রয়েছেন।

তুরস্কে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন এই হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নারী নিহত হয়েছেন। 

এর আগে তুর্কি কর্মকর্তারা ২৩৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন, এদের মধ্যে ৪১ জন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন।

এই হামলার জন্য ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দিকে আঙুল তুলেছেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। হামলার কৌশল আইএসের ‘বৈশিষ্ট্য বহন’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সিআইএ-র পরিচালক জন ব্রেনান।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি।

তুর্কি তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতি ও আতঙ্কিত ‍যাত্রীদের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও পরীক্ষা করে হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।

তুর্কি কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের বিদেশি নাগরিক বলে ধারণা করছে, তবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইলদিরিম জানিয়েছেন, এক হামলাকারী টার্মিনালের বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান। কিন্তু অপর দুজন বিস্ফোরণ ঘটান টার্মিনালের ভিতরে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি টার্মিনাল ভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন আর তার চারপাশের লোকজন পালানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশের গুলিতে সেই ব্যক্তি পড়ে যান আর ২০ সেকেন্ডের মতো মাটিতে পড়ে থাকার পর বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।

তুর্কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিসেফ আকদাগ জানিয়েছেন, আহত ১২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, এদের মধ্যে সৌদি আরব, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, ইউক্রেইন এবং সুইজারল্যান্ডের নাগরিকও রয়েছেন।    

হামলায় আহত এক ক্যাফেকর্মী বুধবার রাতে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে তুর্কি গণমাধ্যম। এই নারীকে নিয়ে নিহতের সংখ্যা ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। 

অনেক বিমানযাত্রা বাতিল ও দেরি হওয়ার পর বুধবার সকাল থেকে আক্রান্ত আতাতুর্ক বিমানবন্দরের কার্যকম আবার শুরু করা হয়েছে, নিয়মিত ফ্লাইটগুলো চলাচল শুরু করেছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান বুধবার একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে এ হামলা ক্রান্তিলগ্ন হিসেবে দেখা দিতে পারে।

তুর্কি শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “হামলাকারীরা মুসলমান না।”

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক করেসপন্ডেন্ট ফ্রাঙ্ক গার্ডনার তার বিশ্লেষণে হামলার সমস্ত লক্ষণে আইএসকেই দায়ী বলে ভাবছেন।

তার মতে, তুরস্কের বিরুদ্ধে হামলা চালালেও আইএসের দায় স্বীকারের ঘটনা বিরল। এ হামলার সঙ্গে ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে চালানো সন্ত্রাসী হামলার ধরনে মিল রয়েছে।

গার্ডনার মনে করেন, তুরস্কের সরকারকে পশ্চিমাঘেঁষা এবং ইসলামসম্মত নয় বলে বিবেচনা করে আইএস। পশ্চিমা নিরাপত্তা জোট নেটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেও দেশটি আইএসের লক্ষ্যস্থল। এছাড়া দেশটিতে আইএসে নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ক্ষুব্ধ মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীটি।

তুরস্কের বিরুদ্ধে লড়াইরত অপর গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিরা বছরের বিভিন্ন সময় বোমা হামলা চালালেও তারা প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও সেনাদের লক্ষ্য করেই শুধু হামলা চালিয়ে থাকে।