প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের ভয়াবহতা

প্রাণভয়ে আতঙ্কিত যাত্রীরা ছুটছেন দিগবিদিক; কেউ ঢুকছেন কাচঘেরা কক্ষে, আবার পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে কেউ করছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2016, 06:59 PM
Updated : 29 June 2016, 07:12 PM

মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে হামলাকারীরা গুলিবর্ষণ ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন উপস্থিত লোকজন।

“এখানে বোমা আছে!” ভ্রমণকারীরা একে অপরকে সতর্ক করেন।

“একজন বন্দুক নিয়ে আসছে” বলতে শোনা যায় কাউকে কাউকে।

তুরস্কের ব্যস্ততম বিমাবন্দরে তিনজন এই হামলা চালিয়ে অন্তত ৪১ জনকে হত্যা করেন। হামলাকারীদের মধ্যে দুজন ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালে এবং তৃতীয়জন কাছেরই পার্কিং লটে ছিলেন বলে তুরস্কের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান।

তারা তিনজনই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান।  

বিমানবন্দরে উপস্থিত অনেক যাত্রী ও কর্মীদের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা বোঝার জন্য তেমন সময় ছিল না।

মাইন লিদিঙ্ক নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, “সব জায়গায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে, এটা সন্ত্রাসী হামলা ছিল।”

বিমানবন্দরের ব্যাগেজ এরিয়া থেকে ঝাঁকুনি অনুভব করেন উইল কার্টার। বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানান তিনি।

বিস্ফোরণে পুরো বিমানবন্দর কেপে ওঠায় খারাপ কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলেন টার্নার।

“কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না তা বোঝার মতো যথেষ্ট জোরালো শব্দ হয়,” সিএনএনকে বলেন তিনি।

মিনিটখানেক পর তিনি তৃতীয় বিস্ফোরণ অনুভব করেন। এবার টার্মিনালের মধ্যে একটি ‘আলোর ঝলকানি’ দেখেন তিনি। টার্নার ও অন্য যাত্রীরা পালানোর চেষ্টা করায় আতঙ্ক ও চিৎকারে ভরে ওঠে কক্ষটি।

বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক মিনিট আগে ওই এলাকা দিয়ে যান বিমানবন্দরের কর্মী লেভেন্ট কারাওগ্লান। যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তখন একটি বিমানের মধ্যে ছিলেন তিনি।

“বিমানের মধ্যে থাকলেও বিস্ফোরণে আমি বড় ধরনের ঝাঁকুনি খেয়েছিলাম। যখন আমি বিমানবন্দরে ফিরে এলাম, তখন সব জায়গা ধোঁয়াই আচ্ছন্ন, সব জানালার কাচ ভাঙা এবং লোকজন অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল।”

সাধারণত যে কাউন্টারে কাজ করেন তার কাছেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার সহকর্মী যারা টিকেট বিক্রির ডেস্কে কাজ করেন, তারা মেঝেতে ছিল এবং কান্নাকাটি করছিল। কয়েকজন আহত হয়েছিল।”

তিনি বুঝতে পারেন: “অনেকে হতাহত হয়েছেন; হাত, পা ও সবকিছু সব জায়গায় পড়েছিল।”

“এটাকে ধ্বংসাত্মক মুভির মতো মনে হচ্ছিল,” বলেন লরেন্স ক্যামেরন নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী।

রিচার্ড কালনিনস মাত্র বিমানবন্দরে নেমেই দেখতে পান ‘বোমা’, ‘গুলি’ বলে চিৎকার করতে করতে তার দিকে ছুটে আসছে মানুষ। তারা সবাই আবার ঘুরে দৌড়াতে শুরু করে। অন্যদের সঙ্গে তিনিও আটকা পড়েন একটি করিডরের এক কোণায়।

“শুধুই আতঙ্ক। এমন একটি ভয়ের অবস্থা যে, কী হচ্ছে জানি না, একটি কোণায় আটকে থেকে ভাবছি কেউ একজন রাইফেল নিয়ে ছুটোছুটি করছে।”

তিন ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন বলে জানান তিনি।

হামলা শুরুর পরপর ওই বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফাটোস কারাহাসানদের বহনকারী উড়োজাহাজ।

বিমান থেকে নামার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের পোশাক রক্তে ভরে থাকতে দেখেন বলে জানান তিনি।

“বিমানবন্দরের সব জায়গায় মৃত্যুর নিঃশব্দতা নেমে এসেছিল। এটা ছিল হৃদয়বিদারক।”