ইস্তাম্বুলে বিমানবন্দরে ‘জঙ্গি’ হামলায় নিহত ৪১

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্দেভাজন জঙ্গি হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত এবং  আরও অন্তত ২৩৯ জন আহত হয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 28 June 2016, 07:54 PM
Updated : 28 June 2016, 07:54 PM

ইস্তাম্বুল গভর্নরের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে হতাহতের এ সংখ্যা প্রকাশ করে বলা হয়, এ বছর এটি তুরস্কে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিক। আহতদের মধ্যে ১০৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এ হামলা হয়।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন হামলাকারী ট্যাক্সিতে করে বিমানবন্দরে আসে এবং টার্মিনালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশ পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করলে তারা নিজেদের উড়িয়ে দেয়।

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, হামলার ধরন দেখে এর পেছনে ইসলামিক স্টেট ( আইএস) জঙ্গিরা থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি তুরস্কে যে কয়টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর পেছনে হয় আইএস নয় কুর্দি যোদ্ধাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর আতাতুর্ক হয়ে বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চলাচল। ঘটনাস্থল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিতে মেঝেতে এবং একটি টার্মিনাল ভবনের বাইরে আহতদের পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

টেলিভিশন ফুটেজে ঘটনাস্থলের দিকে অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যেতে দেখা যায়।

ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, ‍বিমানবন্দরের কার পার্ক থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। ট্যাক্সিতে করে বিমানবন্দর থেকে আহতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেন, বিশ্বজুড়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই হামলা ‘টার্নিং পয়েন্ট’  হিসেবে বিবেচিত হবে।

“আজ ইস্তাম্বুলে বোমা হামলা হয়েছে, আগামীতে বিশ্বের যেকোনো শহরের যেকোনো বিমানবন্দরে এ ধরণের হামলা হতে পারে।”

আতাতুর্ক বিমানবন্দরের টার্মিনালে প্রবেশ পথে যাত্রীদের তল্লাশির জন্য এক্স-রে স্ক্যানার রয়েছে। কিন্তু সেখানে গাড়ি তল্লাশির ব্যবস্থা সীমিত বলে জানায় বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এ ব্যক্তি টার্মিনাল ভবনে প্রবেশ করছে এবং তার আশেপাশে থাকা মানুষজন ছুটে পালাচ্ছে। টার্মিনাল পুলিশ তাকে গুলি করে, সে ২০ সেকেন্ডের মত মাটিতে পড়ে থাকে এবং তারপর নিজেকে উড়িয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন পল রস রয়টার্সকে বলেন, “সে (হামলাকারী)আপাদমস্তক কালো রঙের পোশাক পরে ছিল। তাবে তার মুখ খোলা ছিল। আমরা একটি কাউন্টারের পেছনে মাথা নিচু করে ছিলাম। এক ফাঁকে আমি দাঁড়াই এবং তাকে দেখতে পাই। পরপর দুইটি বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় সে গুলি করা বন্ধ রেখেছিল।”

“বিস্ফোরণের পর সে ঘুরে আমাদের দিকে আসতে শুরু করে। জ্যাকেটের ভেতর সে তার আগ্নেয়াস্ত্রটি ধরে রেখেছিল। সে ক্রুদ্ধ চোখে চারিদিকে তাকাচ্ছিল। হয়ত সে দেখতে চাচ্ছিল তাকে কেউ আটকাতে যাচ্ছে কিনা। এরপর সে চলন্ড সিঁড়িতে করে নিচে চলে যায়। আমরা এরপর আবার গুলির ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই; তারপর সব কিছুর অবসান হয়।”

হামলার পর আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো বাতিল করে যাত্রীদের হোটেলে ফেরত পাঠানো হয় বলে তুর্কি এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা জানান।

এর আগে এক কর্মকর্তা জানান, ওই বিমানবন্দরের কিছু ফ্লাইট অন্য পথে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এ হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেছে। জার্মানি এ হামলাকে ‘কাপুরুষচিত ও নিষ্ঠুর’ বলেছে।

এ বছর তুরস্কে বেশ কয়েক দফায় বোমা হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ইস্তাম্বুলের পর্যটন এলাকায় দুই দফা আত্মঘাতী হামলা হয়, যার জন্য আইএসকে দায়ী করা হয়।

এছাড়া, রাজধানী আঙ্কারায় দুটি গাড়ি বোমা হামলা হয়, যার দায় স্বীকার করে একটি কুর্দি জঙ্গি গ্রুপ।