ভূমধ্যসাগরে মর্মান্তিকতার আরেক চিত্র

গত বছর সাগরতীরে নিথর হয়ে পড়ে থাকা শিশু আয়লান কুর্দির যে ছবি শরণার্থীদের দুর্দশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল, এ বছরও ভূমধ্যসাগরে মর্মান্তিকতার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে তেমনই আরেকটি ছবি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2016, 04:42 PM
Updated : 30 May 2016, 05:10 PM

জার্মানির এক উদ্ধারকর্মীর বাহুতে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ছোট্ট এক শিশুর দেহ- এই একটি ছবিই গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের ভয়াবহ অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। শিশুটির বয়স একবছরের বেশি হবে না।

ছবিটি বিতরণ করে মানবিক উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সংগঠনগুলো ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের চোখ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

গত বুধ, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে শরণার্থী বোঝাই অন্তত তিনটি জাহাজ ডুবে সাতশ’র বেশি শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ছবির এক বছর বয়সী শিশুটির মৃতদেহ শুক্রবার সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়।

ইতালির নৌবাহিনীর জাহাজে করে রোববার আরো ৪৫টি মৃতদেহ দেশটির দক্ষিণের বন্দর রেজ্জিও কালাব্রিয়াতে নেওয়া হয়। শুক্রবারের ওই দুর্ঘটনার পর ১৩৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

জার্মানির মানবাধিকার সংস্থা সি-ওয়াচ এর একটি নৌকা লিবিয়া ও ইতালির মধ্যবর্তী সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

মার্টিন নামের যে উদ্ধারকর্মী শিশুটির মৃতদেহ পানি থেকে তুলেছেন তিনি ইমেইলে বলেন, “পানির মধ্যে শিশুটিকে মনে হচ্ছিল একটি পুতুল, যেটি দুই বাহু প্রসারিত করে আছে।”

“আমি শিশুটির হাত ধরে তাকে পানি থেকে টেনে তুলি এবং যত্নের সঙ্গে আমার বাহুতে শুইয়ে দেই। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন সে তখনও জীবিত……যেন সে তার ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে বাতাস ধরতে চাইছে, তার উজ্জ্বল, মিশুক কিন্তু নিথর চোখ জোড়া সূর্যের আলোয় চকচক করছিল।”

“নিজেকে শান্ত রাখতে আমি গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করি। মাত্র ছয় ঘণ্টা আগেও শিশুটি জীবিত ছিল।”

শিশুটির বাবা-মা জীবিত আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য দিতে পারেনি উদ্ধারকর্মীরা। রয়টার্স জানায়, জার্মান মানবিক ত্রাণ সংগঠন সি-ওয়াচ সমুদ্র থেকে প্রায় ২৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। যাদের মধ্যে আরও শিশু রয়েছে।

সি-ওয়াচের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সর্বসম্মতিক্রমে ওই ছবিটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “ইইউ-র রাজনীতিবীদরা যদি ভবিষ্যতে সমুদ্রে মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে না চান তবে সর্বনাশের প্রাক্কালে তাদের নিদ্রা ঘুম ভাঙানোর জন্য এ এক প্রবল ধাক্কা।”

“যদি আমরা আর এই ধরনের ছবি দেখতে না চাই তবে আমাদেরকে অবশ্যই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া ঠেকাতে হবে।”

মানবপাচার বন্ধ ও এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা এড়িয়ে যেতে শরণার্থীদের জন্য ইউরোপে প্রবেশের নিরাপদ ও বৈধ পথের ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি।