আর্জেন্টিনার সাবেক সামরিক শাসকের ২০ বছরের কারাদণ্ড

‘অপারেশন কনডর’ এর অধীনে অপরাধ সংঘটনের দায়ে আর্জেন্টিনার সাবেক সামরিক শাসক রেইনালদো বিগনোনেকে ২০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে বুয়েনস এইরেসের একটি আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2016, 05:33 AM
Updated : 28 May 2016, 02:26 PM

শুক্রবার আর্জেন্টিনার ওই আদালতে বিগনোনের পাশাপাশি অভিযুক্ত আরো ১৪ সামরিক কর্মকর্তার রায় ঘোষিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ওই ১৪ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে আট থেকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিন বছর ধরে চলা মামলায় এরা সাবই দোষী সাব্যস্ত হন।

তবে এদের অপর দুই সহকর্মীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।

১৯৭০ এর দশকে দক্ষিণ আমেরিকার স্বৈরশাসকরা পরস্পরের যোগসাজসে ‘অপারেশন কনডর’ নামে এক ষড়যন্ত্রমূলক অভিযানের পরিকল্পনা করে। ওই দশকের মাঝামাঝি গোপনে এই ‘অভিযান’ শুরু করা হয়। অভিযানে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, ব্রাজিল, চিলি, প্যারাগুয়ে এবং বলিভিয়ায় বহু বামপন্থি আন্দোলনকারীকে অপহরণ এবং হত্যা করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮৮ বছর বয়সী বিগনোনে সর্বোচ্চ সামরিক পদাধিকারী, তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনার শেষ সামরিক শাসক। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে উরুগুয়ের সাবেক কর্নেল ম্যানুয়েল কর্দেরো একমাত্র বিদেশি, তার ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

২০১৩ সালে এই মামলার বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে পাঁচ বিবাদি মারা যান। এদের মধ্যে আর্জেন্টিনার সাবেক জান্তা প্রধান জর্জ রাফায়েল ভিদেলাও রয়েছেন।

বুয়েনস এইরিসের আদালতের সবচেয়ে বড় এজলাস কক্ষে এ রায়ের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, এতে এক ঘ্ন্টারও বেশি সময় লাগে।

বেঁচে থাকা নির্যাতিত ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়দের উপস্থিতিতে এজলাস কক্ষ পরিপূর্ণ ছিল। এদের অনেকে আর্জেন্টিনার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন।

আদালত কক্ষে মাত্র একজন বিবাদি উপস্থিত ছিলেন, তিনি অ্যাঞ্জেল ফুরসি। তার বিরুদ্ধে আনা ৬৭টি অপহরণ ও ৬২টি নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ হয়।

রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার পর নিহত ও নির্যাতিতদের পরিবারগুলো ‘প্রেজেন্তে!” বলে চিৎকার করে ওঠে, এই ‘চিৎকার’ চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যাওয়া স্বজনদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল।  

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় শকুনের নামে অভিযানটির নাম রাখা হয়েছিল ‘অপারেশন কনডর’। ১৯৭৫ সালে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের বৈঠকের মাধ্যমে এই অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয়। ব্রাজিল, ইকুয়েডর ও পেরু পরে এতে যোগ দেয়।

১৯৮০-র দশক পর্যন্ত চলা এই অভিযানে ওই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া মার্কসবাদী আদর্শকে রুখতে এক সময়ের শত্রু সেনাবাহিনীগুলো পরস্পরের মিত্রে পরিণত হয়েছিল।