বিবিসি বলছে, এই লাতিন কবির মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে তিন বছর আগে তার দেহাবশেষ কবর থেকে তোলা হয়েছিল।
গেল বছর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, নেরুদার দেহে এক ধরনের অজ্ঞাত ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ তারা খুঁজে পেয়েছেন।
কবির দেহাবশেষ পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল আগামী মাসে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
নেরুদাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে অভিযোগে ২০১১ সালে চিলি সরকার তদন্ত শুরু করে।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ২০১৩ সালের এপ্রিলে তার দেহাবশেষ কবর থেকে তোলা হয়।
মৃত্যুর পর নেরুদাকে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর ৭০ মাইল পশ্চিমে তার স্ত্রীর সমাধির পাশেই শায়িত করা হয়।
নেরুদাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিলো বলে সন্দেহ করে চিলির কমিউনিস্ট পার্টি। আর এ লক্ষ্যে কবর থেকে তার দেহাবশেষ তুলে পরীক্ষার অনুরোধ জানিয়েছিল তারা।
নেরুদা ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে মারা যান।
তার মৃত্যুর ১২ দিন আগে এক রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে সরিয়ে চিলির ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল আগুস্তো পিনোশে।
আলেন্দের মৃত্যু নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। কিন্তু ২০১১ সালের ডিসেম্বরে আলেন্দের দেহাবশেষ পরীক্ষা করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
কিন্তু এরআগে পর্যন্ত তাকে সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হয়েছিল।
কিন্তু তার সাবেক গাড়ি চালক ম্যানুয়েল অ্যারায়া অভিযোগ করেন, বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দেওয়ায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এই কবি।
গেল নভেম্বরে অ্যারায়া তদন্তকারী বিচারক মারিও কারোজাকে জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা আগেও নেরুদা স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করছিলেন ও কথা বলছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, জেনারেল আগুস্তো পিনোশের নির্দেশে গোয়েন্দারা হাসপাতালে নেরুদার শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছিল।
অন্য অনেকেও বিশ্বাস করেন, নেরুদাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কারণ তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দের ঘোর সমর্থক ছিলেন।
শোনা যায় তিনি জেনারেল পিনোশের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
নেরুদার দেহাবশেষ পুনরায় পরীক্ষার মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী এদুয়ার্দো কনট্রারেস বলেন, অনেক সময় চলে গেছে। এই পরীক্ষা অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, “যদিও সকল তথ্য-প্রমাণ নির্দেশ করছে এটি একটি অপরাধ কিন্তু কৌশলগতভাবে তা প্রমাণ করা খুব কঠিন।”
বিশ্বব্যাপী প্রবল জনপ্রিয় কবি পাবলো নেরুদা আজীবন চিলির কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। তিনি একজন আইনজীবী ও একজন সফল কূটনীতিকও ছিলেন।
বিশ্বসাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান গণমানুষের কবি বলে খ্যাত পাবলো নেরুদা।