লুটেরা বিশ্বনেতাদের গুমর ফাঁস

পানামার একটি ল’ ফার্মের এক কোটি দশ লাখ গোপন নথি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে; বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বেরিয়ে আসছে সেই তথ্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2016, 03:49 AM
Updated : 7 April 2016, 04:23 PM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, পানামার এই মোস্যাক ফনসেকা তাদের অন্যতম।

গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কীভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব নথিতে।      

এই মক্কেলদের মধ্যে ৭২ জনের নাম এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যারা কোনো না কোনো দেশের সাবেক বা বর্তমান সরকারপ্রধান। নিজেদের দেশে লুটপাট চালিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন এমন কিছু স্বৈরশাসকের নামও তালিকায় রয়েছে।

মোস্যাক ফনসেকার সেই মক্কেলদের মধ্যে রয়েছেন মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফী এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।

এসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় একটি রুশ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কয়েকজন ঘনিষ্ট সহযোগীও তাতে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

রাশিয়া, ক্রাইমিয়াকে নিজেদের অংশ করে নেওয়ার পর ব্যাংক রোশিয়া নামের ওই ব্যাংকের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্যাংকটি কীভাবে অর্থ পাচার করে আসছিল তা ফাঁস হওয়া নথির মাধ্যমেই প্রথম জানা যাচ্ছে।  

‘পানামা পেপার্স’

# নাম প্রকাশ করা হয়নি এমন একটি সূত্র থেকে মোস্যাক ফনসেকার ওই ১ কোটি ১০ লাখ নথি জার্মান দৈনিক সুইডয়চে সাইটংয়ের হাতে আসে।

# এরপর সুইডয়চে সাইটং সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়।

# আইসিআইজে- এর কাছ থেকে সেসব নথি পায় বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ ৭৮টি দেশের ১০৭টি সংবাদমাধ্যম। এখনও চলছে এসব নথির বিশ্লেষণ।

# সম্পদের  তথ্য গোপন রেখে কর ফাঁকি দিতে মোস্যাক ফনসেকা কীভাবে হোমরা চোমরাদের সহযোগিতা দিয়ে আসছিল, তার বিবরণ এসেছে এসব নথিতে।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দা শুরুর পর আইসল্যান্ডের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক পথে বসে। ওই তিন ব্যাংকের বন্ডে

নথিতে দেখা যাচ্ছে, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন  ও তার স্ত্রী একটি অফশোর কোম্পানির আড়ালে কয়েক কোটি ডলারের সম্পদের তথ্য এতোদিন গোপন করে এসেছেন। 

আরও অনেক নামি দামি লোকের মতো আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির নামও পাওয়া গেছে মোস্যাক ফনসেকার মক্কেলদের তালিকায়।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,নতুন এসব নথিতে মেসির কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এফসি বার্সেলোনার এই খেলোয়াড় ও তার বাবার বিরুদ্ধে স্পেনে কর ফাঁকির মামলা চলছে।

কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে কোন কৌশলে লুকানো হয় বিলিয়ন ডলার- তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে গার্ডিয়ানের এই গ্রাফিক্সে।

মোস্যাক ফনসেকা অবশ্য বলছে, গত চার দশকে তাদের কাজ নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি। কোনো ফৌজদারি মামলার মুখেও তাদের পড়তে হয়নি।  

ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেন, গত ৪০ বছরে মোস্যাক ফনসেকার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের দলিল এসব নথি।

“এসব নথির যে গুরুত্ব, তাতে আমার মনে হয়, এটাই হবে বিশ্বে গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।”