অ্যাসাঞ্জের ‘মুক্তির’ পক্ষে জাতিসংঘ প্যানেল

উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাস থেকে ‘মুক্তভাবে’ বেরিয়ে যাওয়ার এবং দীর্ঘদিন নিবর্তনমূলকভাবে আটকে রাখার কারণে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2016, 01:06 PM
Updated : 5 Feb 2016, 03:17 PM

এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার অ্যাসাঞ্জ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে পূর্ব লন্ডনের একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে পারেন বলে উইকিলিকসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের ‘নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার’ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদন ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ একজন পলাতক আসামি, যিনি বিচার এড়াতে চাইছেন।    

ব্রিটিশ সরকার ধর্ষণ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করতে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান করছেন অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জ। তার অভিযোগ, ব্রিটিশ পুলিশের পীড়নমূলক আচরণের কারণে তিনি বের হতে পারছেন না।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের পর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ শুক্রবার তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকেই অ্যাসাঞ্জ আসলে নিবর্তনমূল বন্দিদশার শিকার। 

“এই বন্দিত্বের অবসান ঘটা উচিৎ। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চলাফেরার স্বাধীনতার বিষয়েও সম্মান দেখাতে হবে।”

নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হওয়ায় অ্যাসাঞ্জের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার আছে বলেও ওয়ার্কিং গ্রুপ মনে করছে।    

উইকিলিকস ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যক কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে দিলে স্পর্শকাতর বিভিন্ন ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও অবস্থান গণমাধ্যমে চলে আসে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেকায়দায় পড়ে যায় বিশ্বের ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধর’ দেশটি। ওই সময়ই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসেন অ্যাসাঞ্জ।

সুইডেনের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের পুলিশ  ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে। নয় দিন পর কঠিন কয়েকটি শর্তে জামিন পান তিনি। পাসপোর্ট জমা রেখে দিনরাত গোড়ালিতে ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরা অবস্থায় এক বন্ধুর বাড়িতে থাকার এবং প্রতিদিন থানায় হাজিরা দেওয়ার শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এরপর অ্যাসাঞ্জ উচ্চ আদালতে গেলেও তাকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তরের পক্ষে রায় আসে। ওই অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুন লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। তার আহ্বানেই ২০১৪ সালে জাতিসংঘ প্যানেল বিষয়টির তদন্ত শুরু করে।

অ্যাসাঞ্জ দাবি করে আসছিলেন, জাতিসংঘ প্যানেলের সিদ্ধান্ত তার পক্ষে গেলে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

কিন্তু তার দাবি যে পূরণ হচ্ছে না, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ সরকার। 

জাতিসংঘের ওই ওয়ার্কিং গ্রুপের বক্তব্য মেনে নেওয়ার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা যে যুক্তরাজ্যের নেই, তা মনে করিয়ে দিয়ে ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ চাইলে যে কোনো সময় দূতাবাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। তবে তাকে সুইডেনে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।  

সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে নেওয়া হলেও ধর্ষণের আরেকটি মামলা তদন্তাধীন। তার বিরুদ্ধে জারি করা ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও বহাল রয়েছে।

আর লন্ডনের পুলিশও বলেছে, অ্যাসাঞ্জ বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেপ্তারের সব চেষ্টাই তারা করবে।