জলবায়ু সম্মেলনে চুক্তির কাজ শুরু

প্যারিস সম্মেলনে বিশ্বের ১৫০ টি দেশের নেতাদের সতর্কবার্ত আর আশার বাণীতে উদ্দীপ্ত হয়ে সরকারের আলোচকরা এখন কথাকে কাজে পরিণত করতে একটি খসড়া জলবায়ু চুক্তিতে মতৈক্যে পৌঁছানোর কাজ শুরু করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2015, 05:07 PM
Updated : 1 Dec 2015, 05:07 PM

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুইজনেই দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছার ওপর জোর দিয়েছেন।

কিন্তু ১৯৫ টি দেশের আলোচকদের সামনে পড়ে আছে ৫০ পাতার একটি খসড়া জলবায়ু পরিকল্পনা যা নিয়ে এখনো বিভিন্ন দেশের মধ্যে রয়ে গেছে মতবিরোধ।

মূল বিরোধের বিষয়টি হচ্ছে স্বচ্ছ জ্বালানির উৎসের জন্য প্রয়োজনীয় কোটি কোটি ডলার। যে জ্বালানি উদীয়মান দেশগুলোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি বাদ দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য একান্ত প্রয়োজন।

অনেক প্রতিনিধিই বলছেন, প্যারিসে জঙ্গি হামলার পর অনুষ্ঠিত এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বেশির ভাগ নেতার উপস্থিতিটাই গতবারের সম্মেলনের তুলনায় অনেক বেশি আশার সঞ্চার করেছে ।

সম্মেলনের শুরুর কথাবার্তা থেকে ‍উৎসাহ বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ। তবে তিনি বলেন, “শুরুটা ভাল হলেও এখনও গন্তব্যে পৌঁছানো বাকী।”

এবারের সম্মেলনে জলবায়ু আলোচনাকে ছাপিয়ে নেতাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে সন্ত্রাসবাদ। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সন্ত্রাসবাদ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এবং সতর্কতার সঙ্গে এ সমস্যা সমাধান করতে হবেবলেই মনে করছেন নেতারা।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ফ্রান্সের প্রেসিডন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ বলেছেন,  “(বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সন্ত্রাসবাদ) একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। আগামী প্রজন্মের জন্য বিশ্বের এই দুইটি বড় সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আরও একধাপ এগিয়ে তাপদাহ, বন্যা ও খরার সঙ্গে সম্ভাব্য জলবায়ু শরণার্থী ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন।

তিনি আশঙ্কাজনক ভবিষ্যতের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিশীলতার কারণে নতুন নতুন সংঘর্ষ শুরু হবে, অতিরিক্ত বন্যার কারণে দিশাহীন মানুষ নিজ দেশে আশ্রয় না‍খুঁজে অন্য দেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটবে।”

জলবায়ু পরিবর্তনকে উদ্বেগ, অসমতা, সঙ্কট ও সংঘর্ষের জন্য দায়ী করেছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী কার্লেস মিশেল।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র টুভালুর প্রধানমন্ত্রী এনেল সপয়াগা বলেন, “আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস…জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবই চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের জন্য দায়ী।”

“আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্ত নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করি তবে ভবিষ্যতে বিশ্ব এবং মানবতাকে কি পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে সেটার ছোট্ট উদাহরণ হচ্ছে আজকের শরণার্থীদের এই দুর্দশা।”

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রিন্স চার্লসও বলেছিলেন, “সিরিয়ায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার মূল কারণগুলোর অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তন।”

তবে সোমবার প্যারিসে এ বিষয়ে কথা না বলে  চার্লস বরং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অন্যান্য সমস্যার কারণে বিশ্বের মনযোগ মূল লক্ষ্যবস্তু থেকে সরে যাচ্ছে যেটা আরও বড় এবং আশু হুমকি হয়ে উঠতেপারে।

বেশকিছু গবেষণায়ও জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধবিক্ষোভের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।

২০১৩ সালে জাতিসংঘের একদল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, দারিদ্র ও হঠাৎ করে অর্থনৈতিক সক্ষমতা হ্রাসের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন পরোক্ষভাবে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ায়।

এ বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে দেশটির একটি জার্নালের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

সেখানে বলা হয়, মানুষ-সৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই সিরিয়ায় ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা খরা হয়। প্রমাণ আছে যে, পরের বছর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর পেছনে অন্যতম প্রধানকারণ হিসেবে এই টানা খরা কাজ করেছে।