ধরিত্রী রক্ষায় আওয়াজ দুনিয়াজুড়ে

একটাই বিশ্ব- আর সেটাই রক্ষা করতে হবে- এই দাবিতে সিডনি থেকে লন্ডন পর্যন্ত দুনিয়ার তাবৎ শহরে রাজপথে নেমেছে মানুষ।

>>রয়টার্স
Published : 29 Nov 2015, 07:31 PM
Updated : 30 Nov 2015, 02:27 PM

প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরুর আগে রোববার এই কর্মসূচি থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ বিপদের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিশ্বনেতাদের এই প্রশ্নে এক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ছয় বছর আগে কোপেনহেগেন সম্মেলনের মতো ব্যর্থতাই যেন ঝুলিতে পুরতে না হয়, সেই আশা নিয়ে সোমবার প্যারিসে কপ-টুয়েন্টি ওয়ানে জড়ো হচ্ছেন ১৫০টি দেশের নেতারা।

কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ২০২০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি যেন ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ধরে রাখা যায়, তাতে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতাদের চাপ সৃষ্টিই ছিল বিক্ষোভের লক্ষ্য।

সম্মেলন যেখানে হচ্ছে, সেই প্যারিসে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা পণ্ড হয়ে গেছে পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস ও লাঠিপেটায়। প্যারিসে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর জরুরি অবস্থার মধ্যে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয়।

বাধার পর প্যারিসের লা রিপাবলিক চত্বরে ২০ হাজার জোড়া জুতা রেখে প্রতীকী প্রতিবাদ জানায় কর্মসূচি আয়োজনকারীরা।

প্রতীকী এই প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে একজোড়া করে জুতা পাঠিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ চেয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনও।

প্যারিসে প্রতীকী কর্মসূচি

যে কার্বন পৃথিবীর রক্ষা আবরণ ওজোন স্তর ক্ষয় করতে, তা নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

প্যারিসে আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ হাজার মানুষ তিন কিলোমিটারজুড়ে হাতে হাত রেখে মানববন্ধনে পৃথিবী রক্ষার দাবি তুলেছেন।

“সমগ্র বিশ্ববাসীর এক হওয়ার এটাই সময়,” বলেছেন আয়োজকদের অন্যতম আয়ান কেইথ।

এই মানবন্ধনের পর পদযাত্রা শুরুর পরই পুলিশ বাধা দেয়, তখন সংঘাত বাঁধে।

লন্ডন, সাও পাওলো, বার্লিন, নিউ ইয়র্কসহ প্রায় ২০০০ শহরে এদিন বিক্ষোভ হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির সম্মুখীন পেঙ্গুইন, মেরু ভল্লুকে মতো প্রাণীর সাজে সেজে ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে জড়ো হয় প্রায় ৫ হাজার মানুষ। তাদের অনেকে ছিলেন পেঙ্গুইনের সাজে।

এই সমাবেশ বার্লিনে

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ওপেরা হাউসের সামনে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের বিক্ষোভ হয়েছে। তাদের স্লোগান ছিল- ‘পৃথিবীর বিকল্প আর নেই’, ‘বিদ্যুতের জন্য গাছ কাটা বন্ধ কর’।  

লন্ডনে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার ভিভিয়েন ওয়েস্টউড, অভিনেত্রী এমা থম্পসনের মতো তারকারা।

“এই পৃথিবীটা আমাদের এবং এটি এখন ভীষণ, ভীষণ বিপদে আছে,” কর্মসূচিতে নিজের অংশগ্রহণের কারণ তুলে ধরেন থম্পসন।

সম্মেলনে যোগ দেওয়া দেশগুলো আশা করছে, এবার এমন একটি চুক্তি হবে যাতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভারতা থেকে বায়ু এবং সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগুনোর পথে নতুন মোড় পরিবর্তন ঘটবে।

আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্মেলনে সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতা ও সরকারি কর্মকর্তারাসহ ৪০ হাজারের মতো মানুষ অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আয়োজক দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ প্যারিস সম্মেলনে ‘একটি আবশ্যিক, সার্বজনীন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন; যদিও চুক্তি হওয়া সহজ হবে না বলে মনে করেন তিনিও।

বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সব দেশ একমত হলেও ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা কে’ সেখানে আটকে আছে তা। উন্নত বিশ্ব প্রতিটি দেশের জন্য সীমা বেঁধে দেওয়ার পক্ষে হলেও চীন, ব্রাজিল, ভারতের মতো দেশগুলোর আপত্তি রয়েছে।

এই দেশগুলো বলছে, শিল্পোন্নত দেশ এতদিন যথেষ্ট কার্বন পুড়িয়ে এখন যে বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে চাইছে, যার ফলে তাদের শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হবে।

২০১১ সালে কোপেনহেগেনে কপ-টোয়েন্টি শেষ হয়েছিল এই প্রতিশ্রুতিতেই যে ২০১৫ সালের মধ্যে সর্বসম্মত একটি চুক্তি হবে। সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের আশা নিয়েই বসছে প্যারিসে কপ-টোয়েন্টি ওয়ান।