প্যারিসে জলবায়ু চুক্তির ‘সম্ভাবনা জোরাল’

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে জড়ো হচ্ছেন প্রায় ১৫০ টি দেশের নেতারা। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সোমবার অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তি হওয়ার ‘জোরাল সম্ভাবনাই’ দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2015, 02:43 PM
Updated : 29 Nov 2015, 04:42 PM

তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্যারিসে জঙ্গি হামলার কারণেই এবার নতুন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মালদ্বীপের অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস এর সভাপতি আমজাদ আবদুল্লাহ বলেন, “আমার বিশ্বাস, প্যারিসে হামলার ঘটনা চুক্তির বিষয়টিকে এগিয়ে নেবে। কারণ, সবপক্ষ চুক্তি করতে আগ্রহী বলেই বোধ করছি।”

ওদিকে, যুক্তরাজ্য সরকারের জলবায়ু বিষয়ক একজন সাবেক উপদেষ্টা  এবং পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ই৩জি এর চেয়ারম্যান টম ব্রুক মনে করেন, কিছু কিছু নেতা এ বিষয়টির ওপরই জোর দেবেন যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে সন্ত্রাসবাদের একটি কারণ দূর করা যাবে।

নেতারা ‘চুক্তির দ্বারপ্রান্তেই আছেন’ বলে জানিয়েছেন লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট রেইমন্ডস ভেজনিস। তবে যে কোনো চুক্তিই আইনগত দিক থেকে বাধ্যবাধকতামূলক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সম্মেলনে যাতে ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনের মতো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক করেন ভেজনিস।

বিবিসি জানিয়েছে ‘সিওপি২১’ শীর্ষক এই সম্মেলনে দীর্ঘমেয়াদে কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা চলবে।

২০২০ সালের পরও বিশ্ব ঊষ্ণায়ন রোধের লড়াইয়ের পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছে প্রায় সব দেশের সরকার। সম্মেলন শুরুর মুহূর্তে নানা প্রতিবন্ধকতা এবং মতভেদ অবসানের পথে এটি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি লক্ষণ হিসাবেই দেখছে ফ্রান্স।

এবছর এপর্যন্ত ১৮৩ থেকে ১৯৫ টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনা দিয়েছে। ‘এটি একেবারেই নতুন ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সম্মেলনে যোগ দেওয়া দেশগুলো আশা করছে, এবার এমন একটি চুক্তি হবে যাতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভারতা থেকে বাতাস এবং সৌরশক্তির মতো স্বচ্ছ জ্বালানির দিকে এগুনোর পথে নতুন মোড় পরিবর্তন ঘটবে।

সম্মেলনে ৪০ হাজারের মতো মানুষ অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্মেলন চলবে। ১৪৭ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সম্মেলন উপলক্ষ্যে ফ্রান্সজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন হাজার নিরাপত্তা কর্মী সম্মলন স্থল প্যারিসের লা ব্যুরে ঘিরে রেখেছে।

ওদিকে, সম্মেলনে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার দাবিতে বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনিতে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল করে। তাদের হাতে ‘দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই’ ‘বৈশ্বিক পর্যায়ে একাত্মতা’ প্লাকার্ড ধরা ছিল।

আয়োজকদের বরাত দিয়ে সিডনির মেয়র ক্লভার মোরে টুইটারে বলেন, “মিছিলে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।” সংখ্যাটি নিশ্চিত হলে এটি হবে সিডনিতে হওয়া সবচেয়ে বড় মিছিল। সিডনি ছাড়াও অ্যাডিলেইড ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়ও মিছিল হয়েছে।

প্যারিসেও রোববার শতাধিক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন মুখোশ পরে ছিল। তারা প্লেস দে লা রিপাবলিকে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

১৩ নভেম্বর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর প্লেস দে লা রিপাবলিক প্যারিসের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। মিছিলের আগে বিক্ষোভকারীরা মানববন্ধন করে, যা প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা ছিল।

বিক্ষোভ-সংঘর্ষের কারণে জলবায়ু সম্মেলনে একটি চুক্তির জন্য নেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ প্যারিস সম্মেলনে ‘একটি আবশ্যিক, সার্বজনীন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও চুক্তি হওয়া সহজ হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

অলন্দ বলেন, “মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে যেটা আমরা দেখেছি। জলবায়ুর ব্যাপারেও আমরা একই কথা বলতে পারি। মানুষই প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে এবং পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

প্যারিসে এটি ২১তম জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর চুক্তিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করবে।