বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা এই সৌদি নাগরিকদের মধ্যে দেশটির শিয়া নেতা শেখ আল নিমরের ভাতিজা আলী আল-নিমরও রয়েছেন। ২০১১-১২ সালে সৌদি রাজতন্ত্র উৎখাতের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সৌদি সংবাদপত্র ওকাজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার দায়ে ৫৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
আর আল-রিয়াদের প্রতিবেদনে ৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনার কথা বলা হলেও পরে তা ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সৌদি আরবে চলতি বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যার দিকে তাকালে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এই মানবাধিকার সংস্থা বলছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত অন্তত ১৫১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ, যা ১৯৯৫ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে ৯০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল দেশটি।
ওকাজ লিখেছে, যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা হয়েছে, তাদের মধ্যে ‘আল কায়েদার কয়েকজন সন্ত্রাসী’ ও আওয়ামিয়া এলাকার কয়েকজন রয়েছেন।
আল কায়েদার ওই কথিত সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সৌদি সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর আওয়ামিয়ার আসামিরা সৌদি আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং পাশের দেশ বাহরাইনে হস্তেক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ কাতিফ এলাকার একটি শহর এই আওয়ামিয়া। ২০১১ সালে সৌদি রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে যে শিয়া আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার কেন্দ্রে ছিল এই শহর।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির অভিযোগ, মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা অর্ধ শতাধিক সৌদি নাগরিকের মধ্যে ছয় শিয়া আন্দোলনকারীও রয়েছেন, যারা ‘ন্যায্য বিচার পাননি’।
অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা শাখার উপ পরিচালক জেমস লিঞ্চ বলেন, “সৌদি সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে, এটা স্পষ্ট।”
তিনি বলেন, ওই ছয়জনের মধ্যে তিনজনের ক্ষেত্রে যে বয়সে অপরাধ সংঘটনের কথা বলা হয়েছে, তখনও তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন।নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করারও অভিযোগ উঠেছে।
এই তিনজন হলেন- আলী আল-নিমর, আবদুল্লাহ আল জহির ও হুসেইন আল মারহুন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের সবার বয়সই ১৮ বছরের কম ছিল বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এই ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের মা গত মঙ্গলবার সৌদি বাদশা সালমানের কাছে তাদের সন্তানদের ‘প্রাণভিক্ষা’ চেয়েছেন।
তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানতে পেরে এই মায়েদের ধারণা হয়েছে, এটা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করারই প্রস্তুতি।
এদের মধ্যে চারজনকে আল-হেয়ার কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামণ্ড গত মাসে বলেছিলেন, তিনি কোনোভাবেই আলী আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি মেনে নেবেন না।
এর প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব বলেছিল, ‘শরিয়া আইন’ ও ‘সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া’ মেনেই তারা দণ্ড কার্যকর করে। এ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বললে তা দুই দেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।