ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে রাশিয়া, বাড়ছে উত্তেজনা

তুরস্ক যুদ্ধবিমান ভূ-পাতিত করার পরদিন রাশিয়া সিরিয়ায় বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 07:53 PM
Updated : 25 Nov 2015, 08:18 PM

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বুধবার মন্ত্রণালয়ের টুইটার ফিডে বলেছেন, সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় ঊপকূলে লাটাকিয়ার কাছে হেমিম বিমান ঘাঁটিতে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে তার দেশ।

মিসাইলথ্রেট ডটকম ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ২৫০ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইলের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, যেখানে তুরস্ক সীমান্তের দূরত্ব ৩০ মাইলেরও কম।

সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর জন্য ‘বিপদ বয়ে আনতে পারার মতো যে কোনো লক্ষ্যবস্তুকে’ এটি ধ্বংস করবে বলে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বুধবার রুশ টেলিভিশনকে বলেছেন, মঙ্গলবার তুরস্কের তাদের বিমান ভূ-পাতিত করার ঘটনাটি ‘পূর্বপরিকল্পিত নয়’-এ বিষয়ে ‘গুরুতর সংশয়’ রয়েছে মস্কোর।

“এটাকে পরিকল্পিত উস্কানি মনে হয়েছে।”

বিমান ভূ-পাতিত করার প্রতিবাদে বুধবার মস্কোয় তুরস্ক দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলায় জানালার কাঁচ ভেঙেছে।

মঙ্গলবার সিরিয়া সীমান্তে রাশিয়ার একটি বোমারু বিমান ভূপাতিত করে তুরস্ক বাহিনী। আকাশসীমা লঙ্ঘন নিয়ে কয়েক দফা সতর্ক করার পর বিমানে গুলি চালানো হয় বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

তবে ওই বিমানের দুই বৈমানিকের মধ্যে উদ্ধার ক্যাপ্টেন কনস্ট্যানটিন মারাখতিন বুধবার বলেছেন, তুরস্কের কাছ থেকে কোনো সতর্ক বার্তা পাননি তারা।

“তারা আমাদের সতর্ক করতে চাইলে সমান্তরাল রুটে তাদের দেখা যেত। কিন্তু কিছুই ছিল না।”

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান রাশিয়ার সমালোচনা করে বলেছেন, রুশ যুদ্ধবিমান তুরস্কের আকাশ সীমায় ঢুকেছে, যা তার দেশের সার্বভৌমত্বের লংঘন।

উদ্ধার ক্যাপ্টেন কনস্ট্যানটিন মারাখতিন

রাশিয়ার বিরুদ্ধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেন তিনি।

আসাদের বিরুদ্ধে নিজের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

সন্ত্রাস দমনে অভিযানে থাকা বিমান ভূ-পাতিত করার মধ্য দিয়ে তুরস্ক ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগীর’ ভূমিকা পালন করেছে বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যের পরদিন একথা বলেছেন এরদোয়ান।

বুধবার তিনি বলেন, রুশ বিমান যে এলাকা দিয়ে উড়ছিল সেখানে ‘কোনো দায়েশ (আইএস) নেই”।

“আমাদের ধোঁকা দিও না! আমরা দায়েশের অবস্থান জানি।”

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় সংখ্যালঘু তুর্কমেনদের বসতি, যাদের সঙ্গে তুরস্ক সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

এরদোয়ান বলেছেন, যারা ওই এলাকায় বোমা হামলা চালাবে তারা ‘আমাদের ভাই ও বোন-তুর্কমেনদের ওপর হামলা করবে’।

আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। পাশে স্ত্রী এমিনে এরদোয়ান।

বিমান ভূ-পাতিত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এরদোয়ানকে ফোন করে ‘তুরস্কের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোর সমর্থনের’ কথা জানিয়েছেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করে সিরিয়া অভিযান থেকে মস্কোকে টলানো যাবে বলে ঘোষণা এসেছে রুশ সরকারের পক্ষ থেকে

বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সিরিয়া অভিযানে রুশ বিমান বাহিনী তুরস্কের আকাশসীমার কাছ দিয়ে যুদ্ধবিমান উড়িয়েই যাবে।

তুরস্কের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক যোগাযোগ বন্ধেরও ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল সের্গেই রুদোস্কি বলেছেন, অচিরেই সামরিক যোগাযোগ বন্ধ করা হবে।

পুতিন তুরস্ককে অর্থনৈতিকভাবেও ভোগান্তিতে ফেলতে পারেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

নেটোয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত নিকোলাস বার্নস বলেন, তুরস্ক যে গ্যাস ব্যবহার করে তার প্রায় ৬০ শতাংশই রাশিয়া থেকে আসে। অসন্তোষ হলে খেদ মেটানোর মতো অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আইএস বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও অন্যদের একত্রিত করার যে আশা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ করেছেন তা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক লোকের প্রাণহানির পর আইএসবিরোধী লড়াইয়ে বৃহত্তর জোটের কথা বলেন অলন্দ। বিষয়টি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার তার মস্কো যাওয়ার কথা রয়েছে।