জালিয়াত লুৎফুর এখন দেউলিয়া

ভোট জালিয়াতির কারণে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদ হারানো লুৎফুর রহমান নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 11:07 AM
Updated : 23 Nov 2015, 01:39 PM

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আড়াই লাখ পাউন্ড পরিশোধের এক মামলায় লুৎফুরের হাজিরার তারিখের দুই সপ্তাহ আগে এই খবর এল।

স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য ওয়ার্ফের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, লুৎফুরের আবেদনে যুক্তরাজ্যের ইনডিভিজুয়াল ইনসলভেন্সি সার্ভিস গত বুধবার তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করে।

গত বছর টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, ইমামদের দিয়ে ভোটে প্রভাব বিস্তার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অপপ্রচার এবং সরকারি অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছর ২৩ এপ্রিল আদালত লুৎফরের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে।

সেইসঙ্গে চার বাদীর মামলার খরচ হিসাবে আড়াই লাখ পাউন্ড লুৎফুরকে পরিশোধের নির্দেশ দেন বিচারক।

আড়াই মাস পরও ওই অর্থ পরিশোধ না করায় লন্ডন হাই কোর্ট গত জুলাই মাসে লুৎফুরের সাড়ে ৩ লাখ পাউন্ডের সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেয়।

আগামী ১ ডিসেম্বর ওই মামলায় নিজের অবস্থান তুলে ধরতে আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে লুৎফুরের। 

যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, কেউ দায় বা দেনা পরিশোধে অসমর্থ্য হলে তাকে অবশ্যই আদালতে গিয়ে দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করতে হবে।

আদালত তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করলে সব দায়-দেনা থেকে তিনি রেহাই পাবেন। তবে তার কোনো সম্পদ পাওয়া গেলে তা বিক্রি করে সেই দায় মেটানো হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ারও অযোগ্য হবেন তিনি।   

লুৎফুর যুগের অবসানের পর গত ১১ জুলাই টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচন হয়, যাতে  নতুন মেয়র নির্বাচিত হন লেবার পার্টির জন বিগস। আগের নির্বাচনে লুৎফুর তাকে জালিয়াতির মাধ্যমে হারিয়েছিলেন বলে আদালতে প্রমাণিত হয়।

১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া লুৎফুর শৈশবেই যুক্তরাজ্যে যান। আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার পর ১৯৮৯ সালে তিনি ব্রিটেনের লেবার পার্টিতে যোগ দেন।

লুৎফুর কাউন্সিলে লেবার পার্টির লিডার থাকা অবস্থায় গণভোটের মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটসে নির্বাহী মেয়র ব্যবস্থা চালু হয়। এতে মেয়র কার্যত একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন।

সে সময় জর্জ গ্যালওয়ের রেসপেক্ট পার্টির সঙ্গে ‘আঁতাত করে’ লুৎফুর এ পদ্ধতি চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

লেবার পার্টির অবস্থান সে সময় নির্বাহী মেয়র পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছিল। দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় লেবার পার্টি ২০১০ সালের নির্বাচনে লুৎফুরের মনোনয়নের আবেদন ফিরিয়ে দেয়।

কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ নিয়ে সহজেই ৩২ শতাংশ বাঙালি অধ্যুষিত এ কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফুর।

মেয়র হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে প্রভাব ধরে রাখতে তিনি স্থানীয় মসজিদ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মওলানা শামসুল হকের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়টি কাজে লাগান।

এরপর সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে ২০১৪ সালে লুৎফুর দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের আগের শুক্রবার ১০১ জন ইমাম ও মুসলিম নেতা স্থানীয় বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলোতে একটি চিঠি পাঠান, যাতে বলা হয়, লুৎফুরকে ভোট দেওয়া ‘মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব’।

ভোটের পর চারজন ভোটার নির্বাচন কমিশনে ভোটে প্রভাব সৃষ্টিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন। রয়াল কোর্টস অফ জাস্টিস সেই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করে গত ২৪ এপ্রিল রায় দেয়।

ওই রায়ে লুৎফুরের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে পুনর্নির্বাচনের আদেশ দেয়। সেইসঙ্গে পাঁচ বছর লুৎফুরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উপর দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।