ক্যাপ্টাগনের নেশায় ‘জিহাদে বুঁদ’ আইএস

নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিমা বিশ্ব পর্যন্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া উগ্রপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোদ্ধারা ‘ক্যাপ্টাগন’ নামের এক মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা ও সমর বিশেষজ্ঞরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 05:59 AM
Updated : 23 Nov 2015, 01:28 PM

ধারণা করা হচ্ছে, স্নায়ু উত্তেজক ওই ট্যাবলেট খেয়ে আইএস যোদ্ধারা দিনের পর দিন নির্ঘুম যুদ্ধের ময়দানে পড়ে থাকছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ক্যাপ্টাগন খুব দ্রুত কাজ করে এবং এর প্রভাবেই আইএস যোদ্ধারা সিরিয়ায় বিশ্রামহীনভাবে দিন-রাত যুদ্ধ করতে পারছে। নেশার প্রভাবে কোনো ধরনের বিচার বিবেচনা ছাড়াই নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তারা।

গত বছর করিম নামের ১৯ বছর বয়সী এক আইএস যোদ্ধার বরাত দিয়ে সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জঙ্গিদের উত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের বিষয়টি উঠে আসে। করিম অনেকদিন আইএসের সঙ্গী হয়ে লড়েছেন।  

“ওরা আমাদের নেশার বড়ি খেতে দিত। এটা এমনভাবে কাজ করে যে, আপনি বাঁচবেন না মরবেন, সেই চিন্তা না করেই যুদ্ধ করে যাবেন।”

কুর্দি বিদ্রোহী হিসাবে করিম যখন সিরিয়ার কারাগারে আটক ছিলেন, তখন তার ওই সাক্ষাৎকার নিয়েছিল সিএনএন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ধারণা, আইএসের ‘জিহাদিরা’ যে মাদক নিচ্ছে তা আসলে ‘ক্যাপ্টাগন’।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে সিরিয়া এখন ওই মাদকের সবচেয়ে বড়ো উৎপাদক ও ভোক্তা দেশে পরিণত হয়েছে।

শুধু আইএস যোদ্ধাদের মধ্যেই নয়, সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে রয়েছে ক্যাপ্টাগনের ব্যাপক ব্যবহার। ধারণা করা হয়, সৌদি আরবে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ এই নেশার জন্যে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।

সম্প্রতি বৈরুত বিমানবন্দরে সৌদি এক প্রিন্সের ব্যক্তিগত বিমান থেকে দুই টন ‘ক্যাপ্টাগন’ ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। বিমানটি সৌদি আরব যাচ্ছিল। 

ষাটের দশক থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্যাপ্টাগন পাওয়া যায়। শুরুতে বিষণ্ণতা কাটানোর চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হলেও পরে এটি নেশার বড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ফলে অনেক দেশেই ক্যাপ্টাগন নিষিদ্ধ।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাপ্টাগনের বড় উৎস হয়ে উঠেছে সিরিয়া। সেখান থেকে ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে এই মাদক।

এই ট্যাবলেট যারা সেবন করেছেন, তাদের ভাষ্য, ক্যাপ্টাগন নিলে ঘুম তো দূরের কথা, চোখ বন্ধও করা যায় না। আর একবার এই নেশায় অভ্যস্ত হলে আর সুস্থ জীবনে ফিরে আসা যায় না।

মেডস্টার ওয়াশিংটন হসপিটাল সেন্টারের চিকিৎসক রবার্ট কিসলিং ক্যাপ্টাগনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, “আপনি দিনের পর দিন জেগে থাকতে পারবেন। ঘুম আসবে না। এ নেশা আপনাকে ভালোলাগার অনুভূতি আর চরম আনন্দে রাখবে। আপনি নিজেকে অপরাজেয় মনে করবেন, ভাববেন কেউ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপ্টাগনের এই ‘জাদুকরী’ প্রভাবই যুদ্ধের ময়দানে জঙ্গিদের জাগিয়ে রাখার পাশাপাশি উগ্র মতবাদ লালনের শক্তি যোগাচ্ছে।

আইএসের আগে আল-কায়েদাও তাদের বুলেটবিদ্ধ যোদ্ধাদের কষ্ট কমাতে এ ধরনের ড্রাগ(অ্যামফিটামিন) ব্যবহার করার পরামর্শ দিত। এ ধরনের মাদক ব্যবহার তাদের যুদ্ধের মাঠে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলত বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

শুধু ক্যাপ্টাগন নয়, সিরিয়ায় লড়াইরত সব পক্ষই ভয়ঙ্কর সব উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি এবং পাচারে জড়িয়ে পড়েছে বলে সিএনএন এর এক খবরে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ পর্যবেক্ষণকারী কার্যালয়ের ইউরি ফেদোতভ গত জুনে এক সম্মেলনে জানান, আইএস ও আল নূসরা ফ্রন্ট ক্যাপ্টাগন তৈরির কাঁচামাল পাচারে জড়িত।

জঙ্গি অর্থায়ন তদন্তে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা ম্যাথু লেভিট জানান, পারস্য উপকূলের দেশগুলোয় ক্যাপ্টাগনের ব্যবসা বেশ রমরমা।

বর্তমানে ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসিতে কর্মরত লেভিট বলেন, “গত কয়েক বছরে সিরিয়া ও লেবাননে এর উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই মাদক বিক্রির অর্থেই সিরিয়ার কিছু কিছু জিহাদি দল চলছে।”