নৈশ স্কুল থেকে স্টকহোমে সাতোশি ওমুরা

স্কুলে যাওয়ার জন্য ভোর থেকে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতে হত। ধান রোপণ থেকে শুরু করে কৃষকের সব ধরনের কাজ করে তবেই স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ মিলত সদ্য নোবেল জয়ী জাপানি অধ্যাপক সাতোশি ওমুরার।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2015, 10:35 AM
Updated : 7 Oct 2015, 10:35 AM

কৃষক পরিবারের বেড়ে ওঠা এ বিজ্ঞানীর জীবনের শুরুর গল্পটি ভিন্ন হলেও আবিস্কারের নেশা তাকে এনে দিয়েছে জগৎখ্যাতি। একজন সামান্য নৈশ্ স্কুলের শিক্ষক থেকে স্টকহোমের নোবেল পাওয়ার গল্পটি তিনি তুলে ধরেছেন সাংবাদিকদের সামনে।

সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে চীন ও আয়ারল্যান্ডের অন্য দুই বিজ্ঞানীর সঙ্গে জাপানের এই বায়োজ্যেষ্ঠ অণুজীববিদের পুরস্কার পাওয়ার পরের অনুভূতির স্ফূরণ ঘটেছে। যিনি ফাইলেরিয়ার পরজীবীর ঔষধ ওভারমেকটিন আবিস্কার করেছেন।

জাপানের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোন অধ্যাপক এমিরিটাস যিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল পুরস্কার জয় করলেন।

সাতোশি ওমুরা বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারের বেড়ে উঠি। তিন ভাইয়ের সঙ্গে কৃষিকাজ করেছি। স্কুলে যাওয়ার আগে, আবার স্কুল থেকে ফেরার পর বাবার কৃষি কাজে সহায়তা করতে হয়েছে।

১৯৩৫ সালে জন্ম নেয়া এ্ই বিজ্ঞানী কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে একটি নৈশ স্কুলে পড়ানোর দায়িত্ব নেন।

 টোকিও মেট্রোপলিটন সিমুদা টেকনিক্যাল স্কুলে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। কর্মজীবী মানুষদের রাতে শিক্ষা দিয়ে উপার্জিত অর্থে নিজে পড়াশোনা করতেন। তবে পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলার প্রতিই বেশি আগ্রহ ছিল তার।

টোকিও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি নৈশ স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।

সাতাশি ওমুরা বলেন, জীবনের গল্প আমাকে গবেষণা করতে উৎসাহ দিয়েছে। নৈশ স্কুলে আসা আমার ছাত্রদের জীবন কাহিনী আমার চলার গতি বাড়িয়েছে।

তখন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করি, জীবনে এই মানুষদের জন্য কিছু করব। ইমানাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর বিয়ারে থাকা অনুজীব নিয়ে আমার উৎসাহ বাড়ে। তা থেকেই এটি নিয়ে আমি গবেষণা শুরু করি।

আমি যখন কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করি তখন আমার উপার্জিত অর্থে গবেষণার খরচ মিটতো না। আমার স্ত্রীর উপার্জিত অর্থে সংসার চলত।

নোবেল পুরস্কার জয়ে স্ত্রীর ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে খুব হিসেবি ছিল। আমি যখন কোন হিসাব মিলাতে পারতাম না, তখন টেলিফোন করে তাকে জানালে সে উত্তর দিয়ে দিত।

১৯৭৬ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও ওমুরার এ সহধর্মীনী ২০০০ সালে মারা যান।

স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার গবেষণার অন্যতম প্রেরণা ছিল ফুমিও। সে যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে আমার চেয়ে সে বেশি খুশি হতো। আমার নোবেল পাওয়া সার্থক হত।

প্রায় ৪৭০ টি জৈব উপদান আবিস্কার কর্তা ওমুরা আইভারমেকটিন  খুঁজে পান টোকিওর এক গলফ মাঠে।

১৯৮০ সালে শুরু দিকে তার বিশ্লেষিত এই রাসায়নিক কণাটি পরবর্তীতে আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় যুগপৎ ভূমিকা পালন করে।

এ ঔষধ তিনি আফ্রিকায় কয়েকবার বিনামূল্যেও দিয়েছেন।

এরই এক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৪ সালে আমি যখন আফ্রিকায় গেছি, তখন আমার পরিচয় দিলে কেউ চিনতে পারেনি। কিন্তু যখন বলেছি মেকটিজিন, তখন ওরা বলছে ও তুমিই সেই মেকটিজিনের আবিস্কার কর্তা?

ওদিকে, মঙ্গলবার টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের তাকাকি কাজিতা পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন। জাপানজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।