ডিএনএ মেরামতের গবেষণায় রসায়নের নোবেল    

জীবন্ত কোষ কী করে তার ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত করে, আর কেমন করে জিনে থাকা তথ্যের সুরক্ষা দেওয়া হয়- সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে এবার রসায়নের নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2015, 10:19 AM
Updated : 4 Oct 2016, 07:08 AM

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স বুধবার এ পুরস্কারের জন্য সুইডেনের টোমাস লিন্ডল, যুক্তরাষ্ট্রের পল মডরিচ ও তুরস্কের আজিজ সানজারের নাম ঘোষণা করে।

অ্যাকাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জীবন্ত কোষের ভেতরে কী ঘটে সে বিষয়ে আমাদের মৌলিক ধারণা দিয়েছে তাদের গবেষণা; এর মধ্য দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার পথ খুলেছে।”  

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার গবেষক আজিজ সানজার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালে, তুরস্কে। একইবছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া পল মডরিচ কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে।

আর ১৯৩৮ সালে সুইডেনে জন্ম নেওয়া টোমাস লিন্ডল গত তিন দশক ধরে যুক্তরাজ্যে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন ক্যান্সারের গবেষণায়।

সুইডেনের বিজ্ঞানী টোমাস লিন্ডল

নোবেল পাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষক লিন্ডল বলেন, “আমি অভিভূত। বিগত বছরগুলোতে বহুবার আমার নাম এ পুরস্কারের মনোনয়নের তালিকায় এসেছে বলে আমি শুনেছি। কিন্তু আরও শত শত বিজ্ঞানীর নামও এসেছে। আজ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পর নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। 

নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, জীবকোষের বংশগতির বাহক হিসেবে পরিচিত ডিএনএ প্রতিদিন নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে থাকে। অতিবেগুনী রশ্মি এবং ফ্রি রেডিকেল যেমন ডিএনএর ক্ষতি করতে পারে, প্রতিদিন মানবদেহে কয়েক কোটি বার কোষ বিভাজনের সময়ও ডিএনএ’র অনুলিপি তৈরির ক্ষেত্রে ত্রুটি দেখা দিতে পারে।    

অধ্যাপক লিন্ডল বলেন, “সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে রাসায়নিকের অতিক্ষুদ্র কণা আমাদের দেহে প্রবেশ করে, যা ডিএনএর অনুলিপি তৈরির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করে। এর ফলে বদলে যায় জিন। এর ডিএনএ কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ক্যান্সারের কারণ ঘটাতে পারে।” 

তুরস্কের গবেষক আজিজ সানজার

এই বিচ্যুতি ঠেকাতে কোষের ভেতরে সর্বক্ষণই সংশোধন ও মেরামতের কাজ চলে। এই মেরামতের কাজটি যেভাবে হয়, তা উঠে এসেছে রসায়নে নোবেল পাওয়া এবারের তিন বিজ্ঞানীর গবেষণায়। 

১৯৭০ এর দশকে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ডিএনএ হয়ত স্থিতিশীল। কিন্তু লিন্ডল তার গবেষণায় দেখেন, অত্যন্ত দ্রুত এর ক্ষয় হয়। এই পথ ধরেই কোষের নিজস্ব মেরামতের একটি প্রক্রিয়া তিনি উৎঘাটন করেন। 

অতিবেগুনী রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ যেভাবে মেরামত হয়, তা উদঘাটন করেন আজিজ সানজার। তিনি দেখান, অন্য ধরনের ক্ষতির ক্ষেত্রেও কোষীয় এই প্রক্রিয়া কাজ করে।

এই মেরামতের প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা নিয়ে যাদের জন্ম হয়, তাদের ত্বক সূর্যের আলোর ক্ষেত্রে হয় খুবই স্পর্শকাতর। অতিবেগুনী রশ্মির কারণে ত্বকের ক্যান্সারও হতে পারে।

কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ অনুলিপি তৈরির ক্ষেত্রে ক্ষতি মেরামতের প্রক্রিয়াটি উঠে আসে অধ্যাপক পল মডরিচের গবেষণায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘মিসম্যাচ রিপেয়ার’।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক পল মডরিচ

আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে এই তিন বিজ্ঞানীর হাতে নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার তুলে দেওয়া হবে।

অনুবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নয়ন ঘটানোর স্বীকৃতি হিসাবে গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের এরিক বেৎজিগ, জার্মানির স্টেফান হেল ও যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম মোয়েনারকে রসায়নের নোবেল দেওয়া হয়েছিল।

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং ১২ অক্টোবর সোমবার অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।