নিউট্রিনো ‘ধাঁধার’ সমাধান করে পদার্থবিদ্যায় নোবেল জয়

পদার্থের অণুতে নিউট্রিনোর রূপ বদলের স্বরূপ খুঁজতে গিয়ে এই কণার ভর থাকার কথা প্রথম জানিয়েছিলেন যারা, সেই দুই বিজ্ঞানী এবার পেয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 10:50 AM
Updated : 6 Oct 2015, 10:50 AM

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার এই পুরস্কারের জন্য জাপানের তাকাকি কাজিতা ও কানাডার আর্থার ম্যাকডোনাল্ডের নাম ঘোষণা করে।

একাডেমির মহাসচিব গোরান হ্যানসন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পদার্থের গভীরে কী ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে তাদের গবেষণা, আমাদের বিশ্ববীক্ষার সমর্থনে প্রমাণ যুগিয়েছে।”

ফোটনের মত নিউট্রিনোও আলো পরিবাহী; প্রতি মুহূর্তে কয়েক ট্রিলিয়ন নিউট্রিনো বয়ে যায় আমাদের ভেদ করে। তারপরও এই কণা দীর্ঘদিন বিজ্ঞানীদের কাছে একপ্রকার রহস্য হয়েই ছিল।  

ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক জন বাটারওয়ার্থকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তত্ত্বীয়ভাবে সূর্য থেকে যে সংখ্যক নিউট্রিনো পৃথিবীতে পৌঁছানোর কথা, বাস্তবে পাওয়া যায় তার এক তৃতীয়াংশ। গবেষকরা দীর্ঘদিন এই ধাঁধার সমাধান করতে পারছিলেন না।

কাতজা ও ম্যাকডোনাল্ড তাদের গবেষণায় দেখতে পান, ‘হারিয়ে যাওয়া’ নিউট্রিনোগুলো আসলে মাঝপথে রূপ বদলে ফেলে। 

নিউট্রিনো ভরহীন বলে যে ধারণা বিজ্ঞানীদের মধ্যে আগে প্রচলিত ছিল, তাও ভুল প্রমাণিত হয় এ দুই বিজ্ঞানীর গবেষণার ফলে। তারা দেখান, নিউট্রিনো যত ছোট কণাই হোক, রূপ বদলাতে হলে তাদের ভার থাকতে হবে।

তাদের এই আবিষ্কারের পর পদার্থবিদ্যার তথাকথিত ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন দেখা দেয়।  

১৯৫৯ সালে জাপানে জন্ম নেওয়া তাকাকি কাজিতা টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি ইনস্টিটিউট ফর কসমিক রে রিসার্চ-এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর ১৯৪৩ সালে কানাডায় জন্ম নেওয়া আর্থার বি ম্যাকডোনাল্ড এখন কিংসটনের কুইনস ইউনিভার্সিটির এমিরিটারস অধ্যাপক।  

নোবেল কমিটির ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এই খবর যে অভাবনীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

“তবে আমি সৌভাগ্যবান, অনেক সহকর্মীকে আমি পেয়েছি, যারা আমার এই কাজের অংশীদার।”

রীতি অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে তাকাকি কাজিতা ও আর্থার ম্যাকডোনাল্ডের হাতে নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার তুলে দেওয়া হবে।

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং ১২ অক্টোবর সোমবার অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

জ্বালানি সাশ্রয়ী উজ্জ্বল আলো তৈরি করতে পারে এমন নীল এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) উদ্ভাবনের জন্য গতবছর জাপানি গবেষক ইসামু আকাশাকি, হিরোশি আমানো ও সুজি নাকামুরাকে পদার্থের নোবেল দেওয়া হয়।