চেরনোবিলের পুনরুজ্জীবন

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনায় মারাত্মক তেজস্ক্রিয় দূষণে পরিত্যাক্ত ইউক্রেইনীয় শহর চেরনোবিল ৩০ বছর পর দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ছাপিয়ে প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।

>>রয়টার্স
Published : 6 Oct 2015, 05:02 AM
Updated : 6 Oct 2015, 09:47 AM

মানুষের জন্য নিষিদ্ধ ওই এলাকাটি বল্গাহরিণ, হরিণ, নেকড়ে, শুকর ও বন বেড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে সোমবার ‘কারেন্ট বায়োলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

১৯৮৬ সালে ওই দুর্ঘটনার পর চেরনোবিলের চার হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে স্থায়ীভাবে মানুষের জন্য ‘নিষিদ্ধ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছিল। ৩০ বছর পর এলাকাটির লক্ষণীয় বাঁক-পরিবর্তন থেকে এই ধারণাই পাওয়া যাচ্ছে, তেজস্ক্রিয় দুষণ বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ও সংখ্যাবৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না।

চেরনোবিলের উদাহরণে বন্য-স্তন্যপ্রায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পথে ‘মানুষের নেতিবাচক প্রভাবের’ ধারণাটি আরো জোরদার হয়েছে।

“মানুষকে সরিয়ে নেয়া হলেই প্রকৃতির স্ফুরণ  ঘটে, এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনার পরও তা পুনুরুজ্জীবিত হয়,” বলেন ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্সের বিজ্ঞানী জিম স্মিথ।

তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার আগে চেরনোবিলে যে পরিমাণ বন্যপ্রাণী ছিল, তার চেয়ে এখন অনেক বেশি আছে বলেই মনে হচ্ছে।”           

১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয় কণার মেঘ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, হাজার হাজার বাসিন্দা এলাকাটি ছেড়ে যায়, আর ফিরে আসেনি।

লোকালয়হীন ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা আক্রান্ত এলাকার পরিণতি কী হয় তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগটি গ্রহণ করেন স্মিথ ও তার সহযোগী গবেষকরা।

‘নিষিদ্ধ এলাকায়’ চালানো পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে বন্যপ্রাণীদের ওপর তেজস্ক্রিয়তার বড় ধরনের প্রভাব ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সুস্পষ্ট নজির দেখা গিয়েছিল।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চালানো জরিপে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, স্তন্যপায়ীর সংখ্যা ফের বৃদ্ধি পেয়ে দুর্ঘটনার আগের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক জরিপ ও গবেষণায় ওই এলাকায় বল্গাহরিণ, স্থানীয় আরেক ধরনের হরিণ, লাল হরিণ এবং বন্য শুকরের প্রাচুর্য তুলনামূলকভাবে ইউক্রেইনের অন্যান্য সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলগুলোর সমপর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে দেখা গেছে।

তবে চেরনোবিল এলাকায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নেকড়ের সংখ্যা, আর তা একই ধরনের যে কোনো সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনের নেকড়ের সংখ্যা থেকে সাতগুণেরও বেশি।

“বড় ধরনের একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা উৎসের কয়েক মাইলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধির এই অনন্য পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, লোকবসতির চাপ থেকে মুক্ত হলে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জিম বিয়াসলি।

চেরনোবিলের এ গবেষণা থেকে সম্প্রতি পারমাণবিক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত জাপানের ফুকুশিমা এলাকার বন্যপ্রাণীদের ওপর দুর্ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।