তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা সিরিয়ার তিন বছর বয়সী একটি শিশুর প্রাণহীন দেহের ছবি ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত এবং তাদের সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরেছে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই প্রথম এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
অল্প সংখ্যক শরণার্থীকে গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয়া বা মুসলিম ও খ্রিস্টান শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্য করায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
এই সব শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সিরিয়ার প্রতিবেশী আরব দেশগুলোকে ঠিকঠাক ভাবে চাপ দিতে না পারার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসছে।
সৌদি আরবসহ পারস্য উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা পালন করা উচিৎ ছিল বলে মনে করেন অনেকে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ছয়টি উপসাগরীয় আরব দেশ—কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইন সিরিয়ার কোনো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়নি।”
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথও অ্যামনেস্টির এই দাবিকে সমর্থন করেছেন।
২ সেপ্টেম্বর টুইটারে কেনেথ রথ বলেন, “সিরিয়ার কত জন শরণার্থীকে সৌদি আরব এবং অন্যান্য গল্ফ আরব দেশ আশ্রয় দিয়েছে তা অনুমান করুন।”
“০”
ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় এইসব দেশ দূরত্বের দিক থেকে সিরিয়ার অনেক নিকটে।
অনেকেই সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে দায়ী করছে।
রাজনীতি বিশেষজ্ঞ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুলতান সৌদ আল-কাসেমির মতে, পারস্য উপসাগরীয় এইসব দেশগুলোও কম দায়ী নয়।
তিনি বলেন, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের পেছনে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের ভূমিকা রয়েছে। এইসব দেশ প্রকাশ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী বাহিনীকে অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিয়েছে।
ফলে সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের শরণার্থী হয়ে যাওয়ার দায় তাদেরও নিতে হবে বলে মনে করেন আল-কাসেমি।
যদিও এই দেশগুলো কোনোটিই জাতিসংঘের ‘রিফিউজি কনভেনশন ১৯৫১’ তে সাক্ষর করেনি।
তাই সিরিয়ার শরণার্থীদের এইসব দেশে প্রবেশ করতে হলে ভিসার প্রয়োজন হবে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে ভিসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
বিবিসি জানায়, আরব দেশগুলোর মধ্যে আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, সুদান ও ইয়েমেনে সিরিয়ার কোনো নাগরিক ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেন। যদিও দারিদ্র পীড়িত ওই দেশগুলোর কোনোটিতেই যেতে চায় না শরণার্থীরা।
ইউরোপের দেশগুলোর মতো ধনী আরব দেশগুলোরও আশঙ্কা শরণার্থীরা তাদের দেশের নাগরিকদের কর্মক্ষেত্রে ভাগ বসাবে। এছাড়া নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসের বিষয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
সিরিয়ার শরণার্থীদের সাহায্যে অর্থ দানেরও পিছিয়ে ধনী আরব দেশগুলো।