বাবার বর্ণনায় সাগরতীরে ভেসে ওঠা সেই শিশু

তুরস্কের উপকূলে ভেসে আসা যে শিশুর মরদেহের ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কটের ভয়াবহতা, কি ঘটেছিল তার ভাগ্যে? কিভাবে হল তার এ করুণ পরিণতি?

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2015, 06:30 PM
Updated : 3 Sept 2015, 07:04 PM

সেকথাই জানা গেছে শিশুটির বাবার বর্ণনায়। স্ত্রী, সন্তানকে আঁকড়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও যার শেষ রক্ষা হয়নি। নিজে প্রাণে বাঁচলেও সবকিছু হারিয়ে যিনি এখন নিঃস্ব।

অত্যন্ত ভয়াবহ আর হৃদয়বিদারক সেই মুহূর্তের কথাই তুরস্কের দোগান বার্তা সংস্থায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন আবদুল্লাহ। বলেছেন, নৌকাডুবির সময় হাত ফসকে গিয়েছিল তার সন্তান।

মমার্ন্তিক এ ঘটনায় তিন বছরের শিশু আয়লান আল কুর্দি, চার বছরের সন্তান গালেব এবং স্ত্রী রিহানাকে হারান আব্দুল্লাহ।

তার বর্ণনায়, “আমি স্ত্রীর হাত ধরে ছিলাম। কিন্তু হাত ফসকে যায় আমার সন্তান। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম নৌকার সঙ্গে সেঁটে থাকতে। কিন্তু নৌকা ডুবে যাচ্ছিল। চারিদিক ছিল অন্ধকার। সবাই চেঁচামেচি করছিল।”

এনডিটিভি জানায়, বুধবার গ্রিসের কস দ্বীপে যাওয়ার সময় তুরস্ক উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে তলিয়ে যায় ১২ জন সিরীয় শরণার্থী। কিন্তু ৩ বছর বয়সের শিশু আয়লানের দেহ তীরে ভেসে আসার ঘটনাটিই বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।

আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, তুরস্কের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন।

আয়লান কুর্দির নিথর দেহের এ ছবি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সব দেশে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।  চলমান  শরণার্থী সঙ্কটের ভয়াবহতা এবং করুণ চিত্র তুলে ধরেছে এই একটিমাত্র ছবি।

বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, আয়লানের পরিবার সিরিয়ার কোবানে শহরে থাকত । আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরুর পর পরিবারটি তুরস্কে পালিয়ে যায়।

ঘটনার দিন তারা তুরস্কের দক্ষিণে গ্রিক দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। রাতে নৌকাটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করার পরই ডুবতে শুরু করলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যাত্রীরা।

“উপকূল থেকে ৫শ’ মিটারের মধ্যেই নৌকা ডুবতে শুরু করে। ভিজে যায় আমাদের পা”, বলেন আবদুল্লাহ। এ সময়ই আবদুল্লাহ স্ত্রী, সন্তানদের হাত আঁকড়ে নৌকায় থাকার চেষ্টা করার সময় পানিতে তলিয়ে যায় তারা।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “আমি সাঁতরে তীরে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু স্ত্রী, সন্তানদের কাউকে খুঁজে পাইনি। ভাবলাম তারা ভয় পেয়ে দৌড়ে চলে গেছে। কিন্তু তীরে উঠেও তাদের দেখতে না পেয়ে হাসপাতালে যাই। খারাপ খবরটা পাই সেখানেই।”

আবদুল্লাহ সপরিবারে কানাডা যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। আর এখন পরিবারের সদস্যদেরকে সমাহিত করতে তিনি কেবল সিরিয়ার কোবানিতেই ফিরতে চান।