বিষপ্রয়োগে আরাফাত হত্যার তদন্ত চালাবে না ফ্রান্স

ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগের তদন্ত বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরাসি আইন কর্মকর্তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2015, 06:17 AM
Updated : 3 Sept 2015, 11:39 AM

২০০৪ সালে আরাফাত প্যারিসে সামরিক হাসপাতালে মারা যান।

তার মৃত্যুর পর স্ত্রী সুহা দাবি করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সুহার এই অভিযোগের পালে হাওয়া লাগে যখন সুইজারল্যান্ডে আরাফাতের ব্যবহার্য পরীক্ষা করে পোলোনিয়ামের খোঁজ পাওয়া যায়।

প্যারিসের কাছাকাছি ননতে-তে আইন কর্মকর্তাদের দেওয়া এক বিবৃতির বরাতে বৃহস্পতিবার বিবিসি জানায়, পোলোনিয়াম বিষক্রিয়ার বিষয়টি ‘প্রমাণিত নয়’ এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাদের তদন্ত আর চালাবে না।

চলতি বছরের শুরুর দিকে একজন ফরাসি আইন কর্মকর্তা বলেছিলেন, পোলোনিয়ামের যে নমুনা পাওয়া গেছে তা পরিবেশগত প্রকৃতির।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির প্রধান তৌফিক তিরাউয়ি বলেন, “যতক্ষণ না আমরা জানবো আরাফাত কীভাবে নিহত হয়েছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আরাফাতের হত্যাকারীকে ধরতে তদন্ত চালিয়ে যাবো।”

এর আগে দেহাবশেষ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথি পরীক্ষার পর সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা দাবি করেছিলেন, ফিলিস্তিনি নেতার দেহে উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রীয় পদার্থ পোলোনিয়ামের অস্তিত্ব ছিল।

সুইস গবেষকদের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ইয়াসির আরাফাতের স্ত্রী সুহা প্যারিসে রয়টার্সকে বলেছিলেন, “এখন আর সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রমাণ হল, এটা ছিল হত্যাকাণ্ড।”

ইয়াসির আরাফাতের দেহে পাওয়া পোলোনিয়াম-২১০ সাধারণ খাবারের মধ্যে স্বল্পমাত্রায় থাকে, মানবদেহেও প্রাকৃতিকভাবে এর অস্তিত্ব থাকতে পারে।

তবে অতিমাত্রায় দেহে প্রবেশ করালে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ২০০৪ সালে ফ্রান্স মিলিটারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্ট্রোকের সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনে জটিলতাকে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয়।

কিন্তু শুরু থেকেই অনেক ফিলিস্তিনিদের সন্দেহ ছিল, তাদের নেতাকে  বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় এবং এর পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে।

ইয়াসির আরাফাতের স্ত্রী সুহা আরাফাত। ছবি: রয়টার্স

অবশ্য এর আগে হত্যার কয়েকটি ষড়যন্ত্রের তথ্য ছাড়া এই সন্দেহের পক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ ছিল না। আর ইসরায়েলও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।

আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে আল জাজিরার এক প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হলে নতুন করে তা নিয়ে আলোচনা ওঠে।

এর রেশ ধরে ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আরাফাতের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে আবার পরীক্ষা করা হয়।

এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া সুইস বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে বলা হয়, তার দেহাবশেষে ‘অপ্রত্যাশিতভাবে উচ্চমাত্রার’ তেজস্ক্রীয় পোলোনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা প্রকারান্তরে বিষপ্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়।

কিন্তু মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর অনুসন্ধান কাজ শুরু করার কারণে অনেক আলামত চিহ্নিত করা দুরূহ ছিল- তা স্বীকার করে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন গবেষকরা।

ইয়াসিরের দেহাবশেষ তোলার পর রাশিয়া ও ফ্রান্স এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। তবে রুশ গবেষক দল জানিয়েছিল, তারা পোলোনিয়ামের কোনো অস্তিত্ব পাননি।

আরাফাত ৩৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় দলগুলোর মূল সংগঠন ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও’র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি।

২০০৪ সালে পশ্চিমতীরে নিজের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সী আরাফাত। এর দুই সপ্তাহের মাথায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফ্রান্স নেয়া হয়। ওই বছর ১১ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।