মন্দা মোকাবেলায় জাপানের অভিনব কৌশল

অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় জাপান সরকার অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের শ্রমকে কাজে লাগাতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের চাকরি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2015, 02:17 PM
Updated : 31 August 2015, 09:10 AM

ফলে  শিক্ষার্থীরা এখন পড়ালেখা শেষ করার প্রায় এক বছর আগে থেকেই চাকরির সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতকরা ৭০ শতাংশে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জাপানের র্শিক্ষার্থীরা।

জাপানের চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেকটা জটিল।  চাকরির জন্য কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এজেন্সি কোম্পানি। প্রায় ১০ থেকে ১২ ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই একজন নিয়োগপ্রার্থী চাকরি করার সুযোগ পান।

আর এ কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে সরকার। এখন থেকে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ দিতে এজেন্সি কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

জাপান বিজনেস ফেডারেশন সরকারের চাকরি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। তাদের এক কর্মকর্তা মিয়োকি তুমকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত জানানোর পর আমরা অগাস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈষ্ঠ্য শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছি।

আর এসব শিক্ষার্থী তাদের প্রত্যাশিত  স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের প্রায় একবছর আগেই অফার পেয়ে যাচ্ছেন। একারণে পড়ালেখা শেষ করার পর চাকরির জন্য সময় নষ্ট করতে হচ্ছে না।  ফলে তাদের শ্রমশক্তিটা সরাসরি অর্থনীতিতে ধাক্কা দেবে।

ওদিকে, রিক্রুট ক্যারিয়ার কোম্পানি সম্প্রতি তাদের একটি জরিপ তুলে ধরেছে। জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে, ১৫ অগাস্ট  পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল প্রত্যাশিত ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতবছর এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।

সাম্প্রতিক সময়ে জাপানে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বাজারের উর্ধ্বগতি আর আবে সরকারের ‘আবে তত্ত্ব’ নামক নীতিমালার জন্য অর্থনীতির চাকা গতি পাচ্ছে না। এ নিয়ে সরকার অনেকটায় সমালোচনার মধ্যে রয়েছে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য নতুন এ উদ্যেগ কতটা কাজে আসবে সে প্রসঙ্গে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের  শিক্ষার্থী রচিও মাশিদা ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, সাধারণত কোনো চাকরি পেতে জাপানি শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয় মাস থেকে একবছর লেগে যেত। এতে একজন চাকরি প্রত্যাশীর ভোগান্তিও হত। আর তা থেকে যদি কোনো শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি চাকরি নিশ্চিত হয়ে যায়, তাহলে আমাদের কোন টেনশন হবে না।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের চাকরি দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বছরে দুই থেকে তিনবার এজেন্সি কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

জাপানে সাধারণত এপ্রিল ও অক্টোবর সেশনে চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার বিধি রয়েছে। আর ওই দুই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেয়।

এ বিষয়ে জরিপে বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালের প্রত্যাশিত গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের অধিকাংশকে সাময়িক চাকরির সুযোগ দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে ওসাকা, টোকিওয় বড় বড় ৮০ টি কোম্পানি একযোগে তাদের কাছে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রিক্রুটিং কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের হয়রানি এড়াতে আগামী অক্টোবরে বেশকিছু নিয়োগ দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র কাগজপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে।

এমনভাবে নিয়োগ পেয়েছেন আয়ুও ইয়াগি। জাপানের দুগ্ধ প্রস্তুতকরণ কোম্পানি মেজিতে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ইয়াগি ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, আমার পড়াশোনা মার্চ মাসে শেষ হবে। এর আগে চাকরি পাওয়া নিঃসন্দেহে সোনার হরিণ বলতে পারেন।

আর এভাবে নিয়োগ দেয়া হলে দেশ আরো উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে বলেও মনে করেন তিনি।