গুজরাটে বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহত ৮, জরুরি অবস্থা জারি

ভারতের গুজরাটে শিক্ষা ক্ষেত্র ও সরকারি চাকরিতে আরো সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ-সহিংসতায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2015, 05:00 AM
Updated : 27 August 2015, 05:01 AM

নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ ও এক পরিবারের পিতা-পুত্রও রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

বিবিসি ও এনডিটিভি বলছে, এই পরিস্থিতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার নিজ রাজ্যের বিক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সহিংসতা কখনোই কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়।’

মঙ্গলবার রাজ্যের প্যাটেল সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ মানুষ আহমেদাবাদে বিক্ষোভে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ভাঙচুর হয় সরকারি সম্পত্তি। ৪০টি পুলিশ স্টেশনে আগুন দেয়া হয়। অন্ততপক্ষে ৭০ টি বাস জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

এরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার সেখানে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করেছে ভারত কর্তৃপক্ষ।

মোদী আরো বলেন, “আমরা সংঘর্ষ ঠেকাতে কারফিউ জারি করেছি। আজ ব্যবসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না”।

ওদিকে, বিক্ষোভকারীদের ডাকে গুজরাটে বুধবার সকাল থেকে অবরোধ চলে। গুজরাটের মূল শহর আহমেদাবাদ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

এ বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২২ বছর বয়সী নেতা হারদিক প্যাটেল।

বিক্ষুদ্ধরা এভাবেই রাস্তায় আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানায়। ছবি: রয়টার্স

আন্দোলনের নেতা হারদিক প্যাটেল। ছবি: পিটিআই

মঙ্গলবার রাতে পুলিশ হারদিক প্যাটেলকে লাঠিচার্জ করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে।  বিক্ষোভ কর্মসূচি সহিংস রূপ ধারণ করে। সহিংসতা সামাল দিতে আহমেদাবাদ, সুরাট ও মেহসানার বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়।

বিবিসি সংবাদদাতারা জানিয়েছে, সুরাট ও আহমেদাবাদে আধাসামরিক বাহিনীর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, সহিংসতার আশঙ্কায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

সহিংসতা-ভাঙচুরের ঘটনায় আন্দোলনের নেতা প্যাটেল নিজেও সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তার সম্প্রদায়ের মানুষকে লক্ষ্যে পরিণত করায় পুলিশকে দোষারোপ করেন।

এক বিবৃতিতে পাটেল বলেন, ‘আমার সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে পুলিশ এমন ব্যবহার করেছে যেমনটা তারা করে থাকে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’

গুজরাটের প্রায় ২০ ভাগ মানুষ প্যাটেল সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায় অর্থনৈতিকভাবে অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে। দেশটির ডায়মন্ড শিল্পের নিয়ন্ত্রক এবং গুজরাটের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং কৃষকেরা প্যাটেল সম্প্রদায়ের।

তবে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুজরাটের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্যাটেলদের চাকরির পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে।

এরপরই ২২ বছর বয়সী হারদিক প্যাটেল অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মতো তার নিজের সম্প্রদায়ের জন্যও সরকারি চাকরিতে কোটা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।

হারদিকের বক্তব্য- ভারতে পশ্চাৎপদ শ্রেণীভুক্ত বা ওবিসি-কোটার আওতায় যে ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে তাতে প্যাটেলদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ অবস্থায় প্যাটেলদেরও যদি ওবিসি কোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে  পিছিয়ে-থাকা অন্য শ্রেণীগুলোর জন্য সংরক্ষণের সুযোগ-সুবিধা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে।

২০০২ সালে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর থেকেই গুজরাটে সতর্কাবস্থা রয়েছে। ওই দাঙ্গায় কমপক্ষে ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম।