উচ্চ ফলনসীল কৃষিপণ্য ফলানো ও অতিরিক্ত লোকবল ঠেকাতে নতুন এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
জাপানের কৃষকদের অধিকাংশের বয়স ৬৫ বছরের উর্ধ্বে। ২০১৪ সালের এক জরিপে দেশটির কৃষকদের গড় বয়স এসেছিল ৬৪ বছর। বয়স্ক কৃষকদের শ্রম লাঘবের জন্য জাপান সরকার এ পদপেক্ষপ নেয়।
জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তারা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ ধরনের রোবট তৈরির জন্য ১২০ কোটি জাপানি মুদ্রার একটি তহবিল ঘোষণা করেছে। সে লক্ষ্যে গবেষকরা অর্ধেকের বেশি রোবট আবিস্কার করেন কৃষি ও মৎস্য খাতের উন্নয়নে।
মন্ত্রণালয় আরো বলছে, ক্রমবর্ধমান মুখের চাহিদা মেটাতে এবং জাপানের বয়স্ক কৃষকদের সহায়তা করতে এ রোবটগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কৃষিতে রোবটের বৈপ্লবিক জয় আখ্যা দিয়ে জাপানের ওকায়েমা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইচি ইয়াগি বলেন, আমরা কৃষিতে আমাদের সক্ষমতা পৌঁছে দিতে রোবট উদ্ভাবন করছি। ধরুন, একজন ব্যক্তি এক হাতে সাত কেজি কমলার একটি বাক্স তুলতে পারে। কিন্তু আমরা একটি রোবট তৈরি করেছি, যেটি অনায়াসে কুড়ি কিলোর ভার বহন করতে পারে। এ রোবটটি ওই ব্যক্তির কনুই ও বুকে বাঁধা থাকবে যাতে ব্যক্তি নিজেও স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।
আশা করছি, আগামি শীতের আগেই আমরা এ রোবট কৃষকদের দ্বারে পৌঁছে দিতে পারব।
জাপানের জাতীয় কৃষি ও খাদ্য গবেষণা সংস্থার (ন্যারো) প্রধান কার্যালয় ইবারাকি প্রদেশের সুকুবাতে। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র মাশিও ফুকুডা বলেন, আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কৃষিতে আগাছা দূর করতে একটি রোবট তৈরি করেছে। কার সমতুল্য এ রোবট দু’টি ধারালো কাস্তে দিয়ে প্রায় ৮শ’ বর্গমিটারের একটি ফসলী জমি মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে পরিস্কার করে দিতে পারে।
তিনি আরো বলেন, জাপানের অধিকাংশ কৃষি জমি পাহাড়ি ঢালে অবস্থিত। আমাদের এ রোবট প্রায় ৪০ ডিগ্রী কোণে জমির আগাছা দূর করতে পারে।
এই প্রতিষ্ঠানের সাথে ওবিহিরো বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও পশু চিকিৎসা বিভাগ যৌথ উদ্যেগে আরো একটি রোবট তৈরি করেছে। যেটি গাভির দুগ্ধমান ও স্বাস্থ্য অনায়াসে মূল্যায়ন করতে পারে।
দেশটির মৎস্য সম্পদ আহরণ কেন্দ্র হিসিবে পরিচিত ওকোহামা প্রদেশ। সেখানে অবস্থিত জাপানের মৎস্য গবেষণা সংস্থার কার্যালয়। সংস্থাটি বলছে, আমরা সমুদ্রের মাছ ও অন্যন্য প্রাণী সংগ্রহের জন্য মৎস্য আহরনের নৌকা ও ট্রলারে একটি রোবট বসিয়ে দিচ্ছি।
যেখানে সংযুক্ত একটি কম্পিউটার পানির নিচে মাছের সন্ধান, খারাপ আবহাওয়া এবং জিপিএসের মাধ্যমে আশে-পাশের অন্যন্য মাছ ধরার ট্রলারও সনাক্ত করবে। শুধু তাই নয় এ রোবট ট্রলারের জ্বালানির তথ্যও দিতে সক্ষম।
জাপানের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির বিভিন্ন খাতে রোবট ব্যবহারের লক্ষ্যে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ২০২০ সালের মধ্যে রোবট প্রযুক্তিতে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন জাপানি মুদ্রা ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছে।