কেন নেপালে ভূমিকম্প ভয়াবহ

ভূকম্পন প্রবণ অবস্থানের কারণে নেপালে ভূমিকম্প ‘আকস্মিক’ কোনো ঘটনা নয়। তবে অন্য বারের তুলনায় সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পে দেশটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শরীফুল হক আনন্দবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2015, 10:51 AM
Updated : 28 April 2015, 11:25 AM

ইতোমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার। ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ দরবার স্কয়ার বিধ্বস্ত হয়ে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। বিখ্যাত ধারাহারা টাওয়ারের উপরের ছাদটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই-এর।

বিবিসি জানিয়েছে, মধ্য এশিয়ার ভারতীয় টেকটনিক প্লেটের সঙ্গে চাইনিজ প্লেটের ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন হয়েছে নেপালে অবস্থিত পর্বতগুলোর। পৃথিবী ভূ-ত্বকের বিশাল স্ল্যাব দুটি এখনও বছরে ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার করে নিজেদের কাছাকাছি সরে আসছে।

নেপালে বারবার ভূমিকম্প নিয়ে ব্রিটিশ ওপেন ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড রথেরি বলেন, “হিমালয় পর্বতমালা ক্রমাগত ভারতীয় প্লেটটিতে ধাক্কা খাচ্ছে, ফলে সৃষ্টি হয়েছে দুই থেকে তিনটি বিরাট খাদ। আর এই খাদগুলোর কোনো একটির স্থানচ্যুতির কারণেই ঘটেছে এই ভূমিকম্প। কাঠমান্ডুতে হতাহতের সংখ্যার খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে এই সমস্যাটি কতটুকু বিস্তৃত, সেটা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের জন্যই শুধু নয়, ভূমি থেকে কম্পন উৎপন্ন কেন্দ্র মাত্র ১০-১৫ কিলোমিটার হওয়ায় নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি ধারণ করেছে আরও ভয়াবহ রূপ। প্রথম ভূমিকম্পের পর রেকর্ড করা হয়েছে আরও ১৪টির মতো ‘আফটারশক’। এর কোনো কোনোটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে চার থেকে পাঁচের মধ্যে। এরমধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী আফটারশকটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৬ মাত্রার।

প্রথম ভূমিকম্পের পরই নেপালের ভূ-পৃষ্ঠতল নাজুক হয়ে পড়ে। মূল ভূমিকম্পে নেপালের দালানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরবর্তী আফটারশকগুলোতে একেবারে ধ্বসে পড়ে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ভূমিধ্বসের আশঙ্কা

নেপালে অতীতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা থেকে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে ভূমিধ্বসের আশঙ্কা।

পার্বত্য এলাকাগুলোতে ভূমিধ্বসের কারণে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পুরো একটি গ্রাম। ভূমিকম্পের কারণে উপর থেকে গড়িয়ে আসা পাথর এবং কাদায় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে অঞ্চলগুলো।

এছাড়াও ভূমিকম্পপরবর্তী সময়ে সঠিক তথ্যের অভাবে বিলম্বিত হতে পারে জরুরি সাহায্য। এমনকি কর্তৃপক্ষ সম্মুখীন হতে পারে তথ্যবিভ্রাটের।

হিমালয় ঘেঁষা এলাকাগুলোয় ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পগুলো হল- ১৯৩৪ সালের এম৮.১, বিহার ইভেন্ট, ১৯০৫ সালেরর এম৭.৫ কাংগ্রা ট্রেমর এবং ২০০৫ সালের এম৭.৬ কাশ্মীর।

তবে শেষ দুটি ভূমিকম্প ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল এক লাখেরও বেশি। বাস্তুহারা হয়েছিল দশ লাখেরও বেশি মানুষ।