চার দশকে মাইক্রোসফটের ৪০ অর্জন

৪০ বছরে পা রেখেছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল বিল গেটস এবং পল অ্যালেনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

আজরাফ আল মূতীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2015, 11:50 AM
Updated : 5 April 2015, 11:50 AM

এ উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যম এবিসিনিউজ এক প্রতিবেদনে মাইক্রোসফটের চার দশকের পথচলা ও সাফল্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, পণ্য ও স্মরণীয় মূহূর্তেগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনটির আলোকে চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক সে তালিকাটি-

১. বিল গেটস- হার্ভার্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ড্রপআউট, মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষধনীদের মধ্যে অন্যতম একজন। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, গেটসের বর্তমান সম্পদ মূল্য সাত হাজার নয়শ’ বিশ কোটি ডলার!

২. পল অ্যালেন- মাইক্রোসফটের দ্বিতীয় সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৫ সালের মার্কিন সাময়িকী ফরচুনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যালেন জানিয়েছিলেন, ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মাইক্রোসফট’ রাখার ব্যাপারে তিনি বিল গেটসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

৩. মাইক্রোসফটের প্রথম পণ্য- আল্টায়ার ৮৮০০-এর জন্য প্রথম সফটওয়্যার তৈরি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭৮ সালের শেষ নাগাদ প্রথম সফটওয়্যার বিক্রি থেকেই দশ লাখ ডলার আয় করে প্রতিষ্ঠানটি।

৪. ১৯৮০ সালে আইবিএমের সঙ্গে চুক্তিতে আসে মাইক্রোসফট। চুক্তি অনুসারে, আইবিএম কম্পিউটারে ডস অপারেটিং সিস্টেম সরবরাহ শুরু করে মাইক্রোসফট।

৫. ১৯৮৫ সালের ২০শে নভেম্বর মাইক্রোসফট প্রথম উইন্ডোজ ১.০ বাজারজাত করে।

৬. ২১ ডলার শেয়ারমূল্যে গেটস ও অ্যালেন ১৯৮৬ সালে মাইক্রোসফটকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর করেন।

৭. ১৯৮৯ সালে ম্যাক কম্পিউটারের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ‘মাইক্রোসফট অফিস ফর ম্যাক’ তৈরি করে।

৮. ১৯৯০ সালে উইন্ডোজ ৩.০ বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের যুগে পা রাখে মাইক্রোসফট।

৯. ১৯৯৫ সালে উইন্ডোজ ৯৫ লঞ্চ করে প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফটের তথ্য অনুসারে, প্রথম পাঁচ সপ্তাহেই ‘উইন্ডোজ ৯৫’-এর ৭০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল।

১০. উইন্ডোজ ৯৫-এর মাধ্যমেই প্রথম কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা প্রতিটি উইন্ডোতে স্টার্ট মেনু, টাস্ক বার, মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ এবং ক্লোজ অপশনগুলোর সুবিধা পেয়েছিলেন।

১১. ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ১৯৯৭ সালে মাইক্রোসফট তাদের প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজার ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’ বাজারজাত করে।

১২. ২৫ বছর পর ২০০০ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সড়ে দাঁড়ান গেটস।

১৩. মাইক্রোসফট থেকে আয়কৃত নিজ অর্থ দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন শুর করেন গেটস। এখনও সংস্থাটি বিশ্বের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

১৪. গেটসের পর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী পদের হাল ধরেন স্টিভ বলমার। গেটসের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত বলমার ২০১৪ সাল পর‌্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৫. ২০০১ সালের অগাস্টে উইন্ডোজ এক্সপি লঞ্চ করে মাইক্রোসফট। অপারেটিং সিস্টেমটি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়।

 

১৬. ১৯৯০ সালে ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট ও এক্সেলকে একত্র করে অফিস প্যাকেজ তৈরি করে মাইক্রোসফট।

১৭. ১৯৮৭ সালে ফোরথট ইনকরপোরেটের কাছ থেকে এক কোটি ৪০ লাখ ডলারের বিনিময়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রোগ্রামটি কিনে নেয় মাইক্রোসফট।

১৮. ২০০৭ সালে মাইক্রোসফট অফিস প্যাকেজের এক্সেল প্রোগ্রামে ‘মাল্টিপ্লিকেশন বাগ’ ধরা পরে, ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে বিব্রতকর একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।

১৯. মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস এবং ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে রায় দেন এক বিচারক। পরবর্তীতে অবশ্য মাইক্রোসফট এই মামলাটির নিষ্পত্তি করে ও প্রতিষ্ঠানটির উপর থেকে অভিযোগ উঠিয়ে নেয়া হয়।

২০. প্রতিযোগিতা বিরোধী মনোভাবের জন্য ২০০৮ সালে মাইক্রোসফটকে একশ’ ৩০ কোটি ডলার জরিমানা করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।

২১. মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে সমস্যা ধরা পড়ে এবং ২০০৪ সালে ‘ইউনাইটেড স্টেটস কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেডিনেস টিম’ ব্রাউজারের এ বাগটির মাধ্যমে যে পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারার হাতিয়ে নিতে পারবে সে ব্যাপারে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে। মাইক্রোসফট দ্রুত তাদের এ বাগ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ‘ফিক্স’ বের করে।

২২. মাইক্রোসফট ২০০৪ সালেই ঘোষণা দেয় তারা সম্পূর্ণ নতুন ও উন্নত ব্রাউজার বাজারে ছাড়ার লক্ষ্যে ‘প্রজেক্ট স্পার্টান’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছে।

২৩. মাইক্রোসফট ১৯৯৭ সালে অ্যাপলে ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল যা প্রতিষ্ঠানটিকে সেসময় দেউলিয়া হবার হাত থেকে রক্ষা করেছিল।

২৪. সময়ের পরিক্রমায় অ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এবিসিনিউজের তথ্য মোতাবেক, চলার পথে ম্যাক ও পিসি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক বিজ্ঞাপন তৈরি করলেও সরাসরি মাইক্রোসফটকে নিয়ে কখনও একাজ করেনি অ্যাপল।

২৫. এ পর্যায়ে এসে একটু অতীত স্মৃতি রোমন্থন করা যাক। মাইক্রোসফটের সে মজার ক্লিপ আর্ট সংগ্রহের কথা মনে আছে তো?

২৬. ক্লিপি’র কথা ভুলে যাওয়াটাও হয়তো অন্যায় হবে। উইন্ডোজের এ পেপার ক্লিপ সাহায্যকারী সর্বদা ব্যবহারকারীকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকত!

২৭. মাইক্রোসফট ২০১১ সালে ভিডিও ও মেসেজিং সেবা ‘স্কাইপ’ কিনে নেয়।

২৮. ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট তাদের স্কাইপ সেবায় বিভিন্ন সেবা যোগ করতে শুরু করে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘স্কাইপ ট্রান্সলেটর’। এ সেবাটির সাহায্যে ভিন্ন ভাষাভাষীরা নিজ ভাষা ব্যবহার করেই একে অন্যের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের সুবিধা পান।

২৯. ২০১২ সালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮ বাজারে নিয়ে আসে। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমটি উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার শিকার হয়।

৩০. শুধু কম্পিউটারেই নয়, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে স্মার্টফোন জগতেও উইন্ডোজ ফোন নিয়ে আসে মাইক্রোসফট।

 

৩১. ২০১৪ সালে ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নোকিয়া’র মোবাইল ব্যবসা কিনে নেওয়ার মাধ্যমে উইন্ডোজ ফোনের বিষয়টি আরও সম্প্রসারিত করে মাইক্রোসফট।

৩২. ২০১৪ সালে বাজারে আসে মাইক্রোসফটের ভার্চুয়াল সহকারী কর্টানা এবং অ্যাপলের সিরি’র আদলে সেবাটি তৈরি করা হয়েছে এমন খেতাব লাভ করে!

৩৩. ২০১৪ সালে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য বিনামূল্যে নিজেদের অফিস অ্যাপ অ্যাপস্টোরে উন্মুক্ত করে দেয় মাইক্রোসফট।

৩৪. যদিও সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে বিং গুগলের মতো জনপ্রিয় হতে পারেনি, তবুও মাইক্রোসফট বিং-কে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

৩৫. ২০০১ সালে এক্সবক্স বাজারে নিয়ে আসার মাধ্যমে গেইমিং জগতে প্রবেশ করে মাইক্রোসফট।

৩৬. মাইক্রোসফট স্টুডিও ৩৪৩টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে প্রতিনিয়ত গেইমস তৈরি করা হচ্ছে।

৩৭. ২০১৫-এর শুরুতেই মাইক্রোসফট তাদের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গ্লাস ‘হলোলেন্স’ প্রদর্শন করেছে।

৩৮. এ বছরের শেষের দিকেই উইন্ডোজ ৮ এর পর সরাসরি উইন্ডোজ ১০ বাজারে আনছে মাইক্রোসফট। ইতোমধ্যেই মাইক্রোসফটের এ পদক্ষেপটি প্রচুর সাড়া ফেলেছে।

৩৯. ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এক বছর পূর্ণ হল সত্য নাদেলার।

৪০. এটি হয়তো প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় অর্জন। মাইক্রোসফট বিগত ৪০টি বছরে আমাদের কাজের ধরনই বদলে দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে বিশ্বের প্রতিটি বাড়িতে পিসির লক্ষ্য স্থির করেন বিল গেটস, যেটি সেসময় অবাস্তব বলে মনে করা হয়েছিল।