ছুটি নিন স্মার্টফোনের কাছ থেকে

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরানো মডেলের মোবাইলফোনগুলো জায়গা দখল করে নিচ্ছে হাল আমলের স্মার্টফোন। ডিভাইসগুলোতে নতুন নতুন প্রযুক্তির উপস্থিতি যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে ফোনগুলোর প্রতি ব্যবহারকারীদের ‘আসক্তি’। শুধু মোবাইল ফোনের পেছনেই খরচ হচ্ছে দিনের অনেকখানি সময়।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2015, 01:19 PM
Updated : 16 March 2015, 01:19 PM

প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদের সাইট ম্যাশএবল-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  স্মার্টফোন আসক্তি এবং এ সম্পর্কিত মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর করা এক গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ডার্বির গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনো ব্যাক্তি যত বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন ততোই বাড়বে তার আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা।

ওই গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, স্মার্টফোনের পেছনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় ব্যয় করছেন ব্যবহারকারীরা। ওই গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে  ১৩ শতাংশ ছিলেন রীতিমতো ‘স্মার্টফোন আসক্ত’।

স্মার্টফোন আসক্তির সঙ্গে সোশাল মিডিয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মনোবিদ ড. দীপিকা চোপড়া।

এমন পরিস্থিতিতে স্মার্টফোন নির্ভরতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনে আসক্তি এড়ানোর পাঁচ সম্ভাব্য উপায় বাতলে দিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল ডটকম-

১. নোটিফিকেশন  বন্ধ রাখুন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণে একটু পর পরই আসে নানা নোটিফিকেশন। অনেক সময় দেখা যায়, একটি নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে অনেকক্ষণ ব্রাউজ করা হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় চলে যায় ওই ব্রাউজিংয়ের পেছনেই।

এজন্য অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখলে বা ডিভাইস থেকে নোটিফিকেশন আসলে দেওয়া অডিও সংকেত বন্ধ করে রেখে বাঁচানো যেতে পারে মূল্যবান সময়।

২. স্মার্টফোনের পেছনে কতটা সময় খরচ করছেন সে হিসাব রাখুন

স্মার্টফোনে প্রতিদিন কতটা সময় ‘নষ্ট’ হচ্ছে তার সঠিক হিসাব জেনে ধাক্কা খেতে যদি কোন আপত্তি না থাকে তবে কিছু পরিসংখ্যানের সাহায্য নিতে পারেন।

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য ‘কোয়ালিটি টাইম’ বা ও আইওএসের জন্য ‘মোমেন্ট’-এর মতো বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে। এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারী কতক্ষণ স্মার্টফোনের পর্দায় তাকিয়ে ছিলেন তা জানতে পারবেন। চাইলে ব্যবহারের মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করে দেবে অ্যাপগুলো।

৩. প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ রাখুন

খাওয়ার টেবিলে, বা বই পড়ার সময় স্মার্টফোন তেমন কোনো কাজে লাগে না বললে ভুল বলা হবে না। প্রতিদিন কিছু সময় মোবাইল ফোন ছাড়া থাকার চেষ্টা করুন। এই সময়ে মোবাইল ফোন কাছে না রাখলে অকারণে তা চেক করার জন্য সময় নষ্ট হবে না।

৪. ফোন অ্যালার্ম ঘড়ি নয়

অধিকাংশ মানুষই মোবাইল ফোনের অ্যালার্মের উপর নির্ভর করে থাকেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগ থেকে মোবাইল ফোন চেক করে নেওয়ার পর থেকে অ্যালার্ম শুনে ঘুম থেকে ওঠা- এমন অভ্যাস অনেকেরই আছে।

কিন্তু ওই অ্যালার্ম চেক করার সময়, আবার অ্যালার্ম বন্ধ করার সময় কিছুটা হলেও বাড়তি সময় যায় স্মার্টফোনের পেছনে। অ্যালার্ম থেকে নোটিফিকেশন বা মেসেজ চেক করা বা ডিভাইসটি হাতেই আছে বলে একটু ব্রাউজ করে দেখা—এভাবেই খরচ হয়ে যায় বাড়তি সময়। তাই অ্যালার্ম ক্লক হিসেবে স্মার্টফোনের উপর নির্ভর না করার পরামর্শ দিয়েছে ম্যাশএবল। সাইটটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো হয় যদি ঘুমানোর সময় স্মার্টফোনটি সঙ্গে রাখা না হয়।

৫. প্রযুক্তির কাছ থেকে ছুটি নিন

উপরের পরামর্শ মানার পরও যদিও কেউ মোবাইল ফোনের পেছনে সময় অপচয় বন্ধ করতে না পারেন, তবে তাদের কিছু জন্য পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ল্যারি ডি. রোজেন।

ম্যাশএবলকে তিনি বলেন, “একটি সহজ উপায় হচ্ছে ধীরে ধীরে নিজেকে ‘প্রযুক্তি বিরতি’-এর সঙ্গে অভ্যস্ত করা। এক মিনিটের জন্য স্মার্টফোনটি চালু করে মেসেজ, কল থেকে শুরু করে সব ধরনের নোটিফিকেশন চেক করে নিয়ে ১৫ মিনিট পর একটি অ্যালার্ম সেট করে ফোনটিকে বন্ধ কর দিতে হবে। তারপর ফোনের ডিসপ্লে নিচের দিকে দিয়ে ফোনটিকে রেখে দিতে হবে।”

এই ‘প্রযুক্তি বিরতি’-এর সময় প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে বাড়ানোর মাধ্যমে ফোনের আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।